গাজার মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু এখন চরম অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিতে, এবং এর মধ্যে ৫ বছরের নিচে ৩,৫০০ শিশুর অবস্থা ‘অতিব সংকটাপন্ন’, শনিবার এমন তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে, যা এই চলমান সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এখনকার পরিস্থিতিকে ‘অবরোধের মাধ্যমে তৈরি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ বলে অভিহিত করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে শিশুখাদ্য, দুধ, পুষ্টিসাপ্লিমেন্ট ও মানবিক সহায়তা ঢুকতে পারছে না গাজায়, যার ফলে বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।
পুরো বিশ্ব এখন নীরবভাবে গাজায় শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে,” — বলেন মাহমুদ আল সাক্কা, গাজায় অক্সফামের খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান। “অবরোধের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে গোটা মানবতা এখানে প্রশ্নের মুখে।
মৃত্যুসংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬০ হাজার: ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু প্রাণ চাপা পড়ে আছে
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২,৫৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,১৮,০০০-এর বেশি মানুষ। গাজা সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো মানুষের খোঁজ না পাওয়ায় প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়, যার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু করে।
মানবিক সহায়তা বন্ধ, শিশুদের পুষ্টি সংকটে ধ্বংসের মুখে একটি প্রজন্ম
বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরায়েল তার পূর্ণ অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ২৩ লাখ গাজাবাসী, যার অর্ধেকের বেশি শিশু, আজ চরম দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।
বাচ্চাদের জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ আটকে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ, বলছে মানবিক সংস্থাগুলো।
এটা এখন আর কেবল যুদ্ধের পরিণতি নয়— এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বেঁচে থাকার উপায় কেড়ে নেওয়া, — বলেন জাতিসংঘের এক সহায়তা কর্মকর্তা।
আঞ্চলিক উত্তেজনা: হুথি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানে
গাজা সংকটের পাশাপাশি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে আঘাত হানে, যার ফলে আহত হয় অনেকে এবং বিমান চলাচল ব্যাহত হয়।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুথিরা বারবার আঞ্চলিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল, এবং এই হামলা সেই হুমকির বাস্তব প্রতিফলন।
বিশ্বের নীরবতা: একটি প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে
বাড়তে থাকা মৃত্যু, দুর্ভিক্ষ এবং আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত কোনো টেকসই যুদ্ধবিরতি বা মানবিক করিডর চালু হয়নি। প্রতি ঘণ্টায়, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।
২ লাখ ৯০ হাজার শিশুর জীবন এখন সময়ের সঙ্গে এক অসম লড়াই, আর প্রশ্নটা হলো — বিশ্ব কি শেষ পর্যন্ত দাঁড়াবে, না কি নীরবভাবে দেখতে থাকবে একটি প্রজন্মকে ধ্বংস হতে?
Leave a Reply