বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ইতিহাসে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ঘটেছে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৭৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এটাই দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ।
প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার, যা প্রবাসী শ্রমিকদের দেশপ্রেম, পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং অর্থনীতিতে অব্যাহত অবদানের প্রমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, এপ্রিলের রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪.৬০ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশে এসেছিল ২০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
ব্যাংকভিত্তিক চিত্র
🔸রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার,
🔸বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১৪ কোটি ৬৫ লাখ,
🔸বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সর্বোচ্চ ১৬১ কোটি ১০ লাখ ডলার,
🔸আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
সাপ্তাহিক রেমিট্যান্স বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়,
🔸এপ্রিলের শেষ চার দিনেই (২৭-৩০ এপ্রিল) এসেছে ৪৮ কোটি ৯ লাখ ডলার,
🔸২০-২৬ এপ্রিল সময়ে এসেছে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ,
🔸১৩-১৯ এপ্রিল এসেছে ৬৬ কোটি ৬৩ লাখ,
🔸৬-১২ এপ্রিল এসেছে ৯৩ কোটি ৩১ লাখ এবং
🔸প্রথম পাঁচ দিনে এসেছে ১১ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
মার্চে সর্বকালীন রেকর্ড
এর আগে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৪ সালের মার্চ মাসে—৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
প্রবাহের ধারা
🔸জানুয়ারি: ২১৮ কোটি ৫২ লাখ
🔸ফেব্রুয়ারি: ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ
🔸মার্চ: ৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ
🔸এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ২০ লাখ
পূর্ববর্তী রেকর্ড
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে এসেছিল ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, যা এ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল—এপ্রিলের প্রবাহ সেটিকে ছাড়িয়ে গেল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে, বিশেষত আমদানি খাতে চাপ সামাল দিতে এবং টাকার মান রক্ষা করতে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা ও প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
Leave a Reply