বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য এপ্রিল মাসটি ছিল হতাশার আরেক অধ্যায়। এক মাসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে উবে গেছে প্রায় ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সূচকের টানা পতন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি স্পষ্টভাবে চিত্রিত করেছে পুঁজিবাজারের নাজুক অবস্থা।
ঈদের ছুটি শেষে ৬ এপ্রিল লেনদেন শুরুর সময় ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। মাস শেষে ৩০ এপ্রিল তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এপ্রিল মাসেই বাজার মূলধনের ঘাটতি দাঁড়ায় ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
মূলধনের পাশাপাশি টানা কমেছে সূচকসমূহ:
🔸ডিএসইএক্স প্রধান সূচক কমেছে ৩০১.২৫ পয়েন্ট, এপ্রিলের শুরুতে যা ছিল ৫২১৯.১৬, তা শেষে নেমে এসেছে ৪৯১৭.৯১ পয়েন্টে।
🔸ডিএসইএস (শরিয়াহ সূচক) কমেছে ৭৩.৯৪ পয়েন্ট, ১১৬৮.১১ থেকে নেমে ১০৯৪.১৭ পয়েন্টে।
🔸ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে প্রায় ৯২ পয়েন্ট, মাসের শেষে এসে দাঁড়িয়েছে ১৮২২.৮৮ পয়েন্টে।
আস্থার সংকট ও নেতৃত্বহীনতা নিয়ে উদ্বেগ
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বারবার বলে আসছেন—আস্থাহীনতা এখন বাজারের প্রধান সমস্যা। বিনিয়োগকারীদের জন্য দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আতাউল্লাহ নাইম বলেন, “বাজারে স্বস্তি ফেরাতে বিএসইসির (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলামের মতে, বাজারকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ বা দীর্ঘমেয়াদি কর্মপন্থা এখনো অনুপস্থিত।
এদিকে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশ্লেষক ফারুক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, “অর্থনীতির সামগ্রিক টালমাটাল পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। বর্তমান আইনের ভেতরে থেকেই সংস্কার ও স্থিতিশীলতার উপায় খুঁজতে হবে, সুপারিশ নয়—বাস্তবায়ন জরুরি।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে করণীয়
পুঁজিবাজারের এই দীর্ঘমেয়াদি ধস থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। বাজারের প্রতি আস্থা ফেরাতে চাই সংকটের গভীরতা অনুধাবন করে দ্রুত এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ।
চলমান এই পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ এবং নীতিনির্ধারকদের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
Leave a Reply