‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট ২০২৫’-এর কিছু সুপারিশ নিয়ে দেশের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক কাঠামোতে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে রিপোর্টের ছয়টি অধ্যায় ইসলামি শরীয়ত, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি এবং বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রওশন আলী এই রিটটি দায়ের করেন। রিট আবেদনে কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজিব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে রিটটির শুনানি সোমবার (৫ মে) তালিকাভুক্ত রয়েছে।
আইনজীবীর ভাষ্যমতে, ৩১৮ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টের অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ এবং ১২-তে এমন কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শরীয়তি বিধান, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সংবিধানের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
প্রধান বিতর্কিত সুপারিশগুলো হলো—
🔸সমান উত্তরাধিকারের প্রস্তাব: রিপোর্টের অধ্যায় ১১-তে নারী-পুরুষের জন্য সমান উত্তরাধিকারের প্রস্তাব এসেছে, যা কোরআনের সুরা নিসা (৪:১১)-এর স্পষ্ট নির্দেশনার পরিপন্থী।
🔸বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ: ইসলামে অনুমোদিত বহুবিবাহ প্রথা বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত ধর্মচর্চার অধিকার খর্ব করে।
🔸‘My Body, My Choice’ স্লোগান: রিটে অভিযোগ করা হয়েছে, এই স্লোগান ব্যবহার করে শরীয়তের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হয়েছে।
🔸যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি: রিপোর্টে যৌনকর্মকে বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবকে ইসলামি মূল্যবোধ এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা হয়েছে।
🔸লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার ভাষ্য: রিটে উল্লেখ করা হয়েছে, রিপোর্টে ব্যবহৃত ভাষা শরীয়ত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী।
রিটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং উইমেন রিফর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
এই বিষয়টি আদালতের নজরে আসার ফলে ধর্মীয়, সাংবিধানিক এবং সামাজিক সংবেদনশীলতা বিবেচনায় আগামী সপ্তাহজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Leave a Reply