দীর্ঘ ১২ বছর পর আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্তে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। আত্মহত্যার সম্ভাবনা একেবারেই নাকচ করে দিয়ে টাস্কফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—তাদের দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে, এবং অন্তত দুই জন খুনে জড়িত ছিল বলে বৈজ্ঞানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চ্যানেল 24–এর হাতে আসা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত দ্বন্দ্ব– কোনো কিছুই এই হত্যার মোটিভ হিসেবে মেলেনি। এমনকি ভিসেরা রিপোর্টেও কোনো চেতনানাশক বা বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
হত্যায় ব্যবহৃত হয় রান্নাঘরে থাকা ছুরি ও বটি। ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হত্যার আগে তারা জীবিত ছিলেন এবং প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। সাগরের হাত-পা বাঁধা ছিল, যা থেকে ধারণা করা হয়, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। রুনির ক্ষেত্রে, নারী হিসেবে তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল ভেবে হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন মনে করেনি খুনিরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খুনের সময় ঘরে আগে থেকে কেউ অবস্থান করছিল না, এবং বাহ্যিকভাবে জোরপূর্বক প্রবেশেরও প্রমাণ নেই। রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় রুনিকে, পরে খুন হন সাগর। মৃত্যুর সময় তারা একসঙ্গে ছেলের সঙ্গে একই খাটে ঘুমিয়ে ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে চারজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হলেও, এর মধ্যে শুধু সাগর ও রুনির পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। বাকি দুইজন—সম্ভবত খুনিরা—তাদের পরিচয় এখনও অজানা। নমুনায় ৫–৬ জনের মিশ্র ডিএনএ থাকার কারণে পৃথকভাবে শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে টাস্কফোর্স।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে প্রথমেই গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের উপস্থিতি আলামত ধ্বংসে ভূমিকা রাখে, যা তদন্তকে আরও জটিল করে তোলে। রান্নাঘরের বারান্দার সাড়ে ১৪ ও সাড়ে ৮ ইঞ্চি ভাঙা অংশ ছিল পুরোপুরি নতুন, যার মাধ্যমে কারও প্রবেশ ও প্রস্থান সম্ভব ছিল, তবে সেখানেও পূর্ণাঙ্গ পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।
পেশাগত দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত শত্রুতা—কোনোটিই নেই তদন্তের আলোকে
রুনির অফিসিয়াল নথিপত্র, সাগরের মালিকানাধীন এনার্জি বাংলা ডটকম ও রুনির বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড বিষয়ক রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হলেও কোনো সংঘাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি পারিবারিক কলহজনিত হত্যার পর আত্মহত্যার সম্ভাবনাও পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় সাগর (মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক) ও রুনি (এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক) নৃশংসভাবে খুন হন। মামলাটি শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও তদন্ত বারবার থমকে গেছে প্রমাণ সংকটে।
বর্তমান টাস্কফোর্স রিপোর্ট একদিকে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত চরিত্র স্পষ্ট করেছে, অন্যদিকে নতুন করে বিচার ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
Leave a Reply