রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করার প্রস্তাব নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সরকারের সম্ভাব্য সম্মতির খবরে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একই প্রশ্নে একাট্টা—এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে কেন নেয়া হয়নি জাতীয় ঐকমত্য বা অন্তত পারস্পরিক আলোচনা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা সংকটের মতো সংবেদনশীল একটি ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক করিডরের প্রস্তাব যতটা সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ, তার চেয়েও বেশি এটি কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা। ফলে, একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দল, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের সাথে সমন্বিত বোঝাপড়া।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সরাসরি বলেন, “দ্বিতীয় পক্ষকে সাহায্য করতে গিয়ে যদি নিজেদের দেশের ক্ষতি হয়, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে দলীয় রাজনৈতিক পরামর্শ ও জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে একমত হওয়া আবশ্যক।”
এ বিষয়ে যে বহু প্রশ্ন এখনো ঝুলে আছে, সেটি উঠে এসেছে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “এই করিডর আদতে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য ছাড়া তা কার্যকর করা ঝুঁকিপূর্ণ।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রশ্ন তোলেন, “কার সাথে পরামর্শ করে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? নির্বাচনকালীন সরকার এত বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপে গেল কীভাবে?”
একই উদ্বেগ দেখা গেছে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “কোনো নীতিগত সিদ্ধান্তই জনমতের বাইরে নেয়া উচিত নয়। জনগণের জানার ও মতামত দেয়ার অধিকার আছে।”
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “সিদ্ধান্ত হতে হবে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে—এমন সিদ্ধান্ত যেন জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষতি না করে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই করিডর বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জটিলতা আরও বাড়তে পারে। গেল আট বছরে ১৫ লাখ রোহিঙ্গার একজনকেও ফেরত পাঠাতে না পারা বাংলাদেশের জন্য যেমন কূটনৈতিক ব্যর্থতা, তেমনি রাখাইন থেকে এখনো নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার ঢল—সংকটের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, তা যদি স্বচ্ছতা ও সর্বসম্মতির ভিত্তিতে গৃহীত না হয়, তাহলে শুধু রাজনৈতিক বিভাজন নয়, জাতীয় নিরাপত্তাও পড়তে পারে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে।
Leave a Reply