আজ রবিবার, ধর্মীয় মর্যাদা ও গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররমের ১০ তারিখে এই দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ, শোক ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়। ঐতিহাসিক কারবালার হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি এবং হযরত মুসা (আ.)-এর মুক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন মুসলমানদের কাছে বহুমাত্রিক ধর্মীয় তাৎপর্যে সমুজ্জ্বল।
পবিত্র আশুরা একদিকে যেমন কারবালার প্রান্তরে মহান ত্যাগের স্মারক, অন্যদিকে এটি নবী মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের ফেরআউনের কবল থেকে মুক্তির দিন হিসেবেও হাদিসে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজার গুরুত্ব বোঝাতে বলেন,
“আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়।” (সহীহ মুসলিম: ২৫২৩)
মদিনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) লক্ষ্য করেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। কারণ, এ দিনে আল্লাহ মুসা (আ.)-কে মুক্তি দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেন,
“আমরা তো মুসার (আ.) অনুসারী হিসেবে আরও বেশি হকদার।” এরপর তিনি মুসলমানদের আশুরার রোজা পালনের নির্দেশ দেন।
যদিও হাদিসের নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিছু ঘটনা যেমন ফেরআউনের ধ্বংস ও মুসা (আ.)-এর বিজয়ের কথা বলা হয়েছে, তেমনি আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল, নুহ (আ.)-এর নৌকার স্থিতি ও ঈসা (আ.)-এর জন্ম সংক্রান্ত ঘটনাগুলো দুর্বল বা জাল সূত্রে বর্ণিত বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
এছাড়া আশুরার দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে এমন মত প্রচলিত থাকলেও, হাদিস বিশারদগণ একে জাল রেওয়ায়েত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসেছে— জুমার দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে। (তিরমিজি: ২/৩৬২)
আশুরা মানেই হৃদয়বিদারক কারবালা স্মরণ। ৬১ হিজরির এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবার নির্মমভাবে শহীদ হন ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে। ইরাকের কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক ঘটনা মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাবিধুর অধ্যায় হিসেবে গণ্য হয়। এ দিন তাই মুসলমানদের কাছে আত্মত্যাগ ও সত্যের পথে অটল থাকার অনন্য শিক্ষা দেয়।
আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে মুসলিম উম্মাহকে আশুরার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যম আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ ও প্রতিবেদন।
Leave a Reply