গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হয়ে উঠেছে। শনিবার (আজ) ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নয়জন ছিলেন রাফাহর উত্তরে একটি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের কাছে অবস্থানরত। নিহতদের মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে।
গাজার হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহতদের অনেকেই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখনই সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়। এই ধরণের সহায়তা কেন্দ্রে হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৪৩ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী এমন এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অসহায় মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য জড়ো হন। এতে করে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এবং আহতদের সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা এসেছে। হামাস জানিয়েছে, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে “তাৎক্ষণিক” আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এই সময়টিতে গাজায় জরুরি সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি জানিয়েছে, তবে তারা দাবি করেছে—আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা থাকতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়া একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগোয়।
এই ঘোষণা এসেছে এমন সময়, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধে জোর চাপ প্রয়োগ করছেন, যা এখন ২১ মাসে গড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী:
কমপক্ষে ৫৭,৩৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত
১,৩৫,৯৫৭ জন আহত, অনেকেই চিরতরে পঙ্গু
সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে নিহতের সংখ্যা ৭৪৩ ছাড়িয়েছে
অন্যদিকে, ইসরায়েলি পরিসংখ্যানে দেখা যায়:
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত
২০০ জনের বেশি লোক অপহৃত হন, যাদের ভাগ্য এখনও অজানা
সহায়তা কেন্দ্রে ধারাবাহিক হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলছে, মানবিক অঞ্চলে সতর্কতা ছাড়া এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের এক মুখপাত্র বলেন, “মানবিক সহায়তা কেন্দ্রে পূর্ব সতর্কতা ছাড়া হামলা ভয়ংকর ও নিন্দনীয়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর এই সংকটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন—আন্তর্জাতিক চাপে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী না হলে এটি হবে কেবল সময়ক্ষেপণ।
Leave a Reply