মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে—এই দাবি করলেও, বাস্তবতা ভিন্ন বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সাবেক উপমহাপরিচালক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ওল্লি হেইনোনেন। তাঁর মতে, ইরানের হাতে থাকা অস্ত্র-উপযোগী উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের সুনির্দিষ্ট অবস্থান আজও অজানা। এটি আন্তর্জাতিক পরমাণু নজরদারির দৃষ্টিতে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতি।
সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব
৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ৪০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম নিখোঁজ। হেইনোনেন বলছেন, “এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম যদি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা হয়, তাহলে তা দিয়ে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।” তাঁর মতে, যতক্ষণ না IAEA এই মজুদের সঠিক অবস্থান শনাক্ত করছে, ততক্ষণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকবে।
বাঙ্কার বাস্টার হামলা, তবুও ‘বিপদ শেষ হয়নি’
গত ২২ জুন ভোরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনে ইরানের ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে চালানো হয় ৭৫টি প্রিসিশন-গাইডেড এবং একাধিক টমাহক মিসাইল হামলা। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্ডো প্ল্যান্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত, তবে এই হামলার আগেই সেখানে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘বছরখানেক’ পিছিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ বলছে, এ হামলা ইরানের সক্ষমতাকে ‘মেরেকয়েক মাস’ পিছিয়েছে মাত্র। ফলে হেইনোনেন মনে করছেন, বিপদ এখনো বহুদূর কাটেনি।
গোপন প্ল্যান্টেই তৈরি হতে পারে অস্ত্র
হেইনোনেন আশঙ্কা করছেন, ইরান এমন এক গোপন ছোট প্ল্যান্টে ইউরেনিয়ামকে দ্রুত অস্ত্র-উপযোগী করে তুলতে পারে, যেটি সহজেই কোনো শিল্পাঞ্চল বা গুদামে আড়ালে রাখা যায়। মাত্র এক হাজার সেন্ট্রিফিউজ থাকলেই একটি বোমার জন্য যথেষ্ট উপাদান তৈরি সম্ভব বলে জানান তিনি।
ইরানের অতীত ইতিহাসও উদ্বেগ বাড়ায়
১৯৯০-এর দশকে IAEA-কে না জানিয়েই ইরান গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করেছিল—এই তথ্য তুলে ধরে হেইনোনেন বলেন, “ইরানের এই অতীত ইতিহাস তাকে বর্তমানেও সন্দেহজনক করে তোলে।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানের যদি সত্যিই শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির আগ্রহ থাকে, তাহলে IAEA-র তদন্তে বাধা দেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।” তবে এর বিপরীতে ইরান ইতোমধ্যে তাদের সংসদে একটি বিল পাস করেছে, যা IAEA-এর সাথে সহযোগিতা স্থগিত করে দিয়েছে।
উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল—সবই এখনও রয়েছে ইরানের হাতে
হেইনোনেনের মতে, ইউরেনিয়াম ধাতুকে অস্ত্রের উপযোগী আকৃতি দিতে ইরানের মতো দেশের হাতে থাকা প্রযুক্তি ও দক্ষতা থাকলে এক মাসের বেশি সময় লাগে না। এ অবস্থায়, বিশ্বের জন্য চরম সতর্কতা ও তদারকি বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
Leave a Reply