ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ঘিরে শুরু হয়েছে উত্তেজনা, বিভ্রান্তি এবং কূটনৈতিক চাপ। শনিবার (২২ জুন) যুক্তরাষ্ট্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায়— ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান— ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী, এই স্থাপনাগুলো পুরোপুরি “ধ্বংস” করা হয়েছে। তবে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান জানিয়েছে, হামলার আগেই এসব স্থাপনা থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামসহ সকল তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি জানান, সম্ভাব্য হামলার গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরান পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র খালি করে ফেলে। ফলে, বাস্তবিক ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলেই ধারণা করছে তেহরান।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।” তবে এই বক্তব্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ সত্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
বিবিসি নিউজ-এ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ক) মার্ক কিমিট বলেন, “এই মুহূর্তে এটা বলার কোনও উপায় নেই যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ধরনের দাবি রাজনৈতিক, কৌশলগত কিন্তু প্রমাণভিত্তিক নয়।”
এদিকে, ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের “চরম লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, কোনো যুদ্ধবিধিতে পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর এভাবে হামলা বৈধ নয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ফোর্দো, ইসফাহান এবং নাতানজে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের চিরস্থায়ী পরিণতি ভোগ করতে হবে।” তিনি আরও সতর্ক করেন যে, এই আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালাময় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
এদিকে, জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা (IAEA) এবং সৌদি আরব— উভয় পক্ষই জানিয়েছে, হামলার পর এখন পর্যন্ত ইরানের আশপাশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। IAEA জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং নতুন কোনো তথ্য এলে তা প্রকাশ করা হবে।
Leave a Reply