বিশ্ব জ্বালানি বাণিজ্যের কেন্দ্রে থাকা হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরানের পার্লামেন্ট সম্প্রতি এ প্রণালী বন্ধে প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যা বাস্তবায়নের জন্য এখন দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। রোববার (২২ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি, এবং তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় ধরনের উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত তেল ও গ্যাসের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ হয় হরমুজ প্রণালী দিয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ বন্ধ হলে তেলের দাম ও জ্বালানি সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব পড়বে—বিশেষত ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর ওপর।
ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার ও সংসদ সদস্য ইসমাইল কোসারি ইয়াং জার্নালিস্ট ক্লাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি “এজেন্ডায় রয়েছে” এবং “যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই এটি কার্যকর করা হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি কৌশলগত হুঁশিয়ারি, যা পশ্চিমা শক্তির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে বাস্তবে এটি বাস্তবায়িত হলে, ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বজ্বালানি বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তখন ‘ট্যাঙ্কার যুদ্ধ’-এর সময়ও হরমুজ কখনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা উপকূলে চারটি জাহাজে হামলা হয়, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানকে দায়ী করেছিল। যদিও তেহরান সে অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
বর্তমানে গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধারাও লোহিত সাগরের বাব আল-মান্দেব প্রণালীতে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্ববাণিজ্যের বিকল্প রুটকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তা বিকল্প পথে ঘুরিয়ে নেওয়ার সুযোগও সীমিত। কারণ, এই প্রণালী ছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে জ্বালানি রফতানির বাস্তবিক কোনো বিকল্প নেই। এমনকি যারা সরাসরি উপসাগরীয় দেশ থেকে পেট্রোল আমদানি করে না, তারাও প্রভাবের বাইরে নয়। কারণ সরবরাহ কমলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে পারে।
Leave a Reply