রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক স্থবিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে ১৬ বছর পর এই প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ পতনের পর রাজনৈতিক সরকারের অনুপস্থিতিতে এবারের বাজেটের দিকে মানুষের প্রত্যাশা যেমন বেশি, তেমনি শঙ্কাও রয়েছে ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতিকে ঘিরে।
সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং দেশীয় শিল্প সুরক্ষার লক্ষ্য নিয়ে বেশ কিছু পণ্যে কর, শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে, যা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে তার মধ্যে রয়েছে—রড, স্টিল, মার্বেল, গ্রানাইট, এসি, ফ্রিজ, কসমেটিকস, দেশীয় মোবাইল ফোন, বিদেশি চকলেট ও খেলনা, ব্যাটারি ও মোটরচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, হেলিকপ্টার, ওয়ানটাইম প্লাস্টিক, ব্লেড, টেবিলওয়্যার এবং দেশে উৎপাদিত সুতাসহ বিভিন্ন পণ্য। এমনকি সিগারেটের দামও বাড়ানো হয়েছে, যা ধূমপায়ীদের জন্য উদ্বেগের খবর।
তবে বাজেটে কিছু স্বস্তির খবরও রয়েছে। সয়াবিন তেল ও চিনির ওপর ভ্যাট হ্রাস করা হয়েছে, কমেছে মাটি ও পাতার তৈরি পণ্যের দাম। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করায় বিদ্যুৎ ও সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কিছুটা কমবে। তেলের দাম কমায় পরিবহন ব্যয়েও স্বস্তি আসতে পারে। এছাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে উৎসে কর হ্রাস, চামড়া শিল্পে শুল্ক ছাড়, পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, বিদেশি জুস, ক্রিকেট ব্যাট ও সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্টসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমানো হয়েছে।
এই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন এবং একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যদিও বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বলছে—“স্রেফ বাজেটেই সুখবর, বাস্তবে কবে মিলবে তার অপেক্ষায় জাতি।”
Leave a Reply