রাষ্ট্রীয় বাজেটের অঙ্ক কষার কঠিন সমীকরণ সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। তারা চায়, নতুন অর্থবছরের বাজেট হোক বাস্তবমুখী—যেখানে স্বস্তি আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় মিলবে মানসম্মত সুবিধা, এবং আয় অনুযায়ী জীবনযাপন হবে আরামদায়ক।
নরসিংদী থেকে প্রতিদিন রাজধানীতে রিকশা চালাতে আসা আহম্মেদ বারীর কথায় ফুটে ওঠে জনজীবনের বাস্তবতা। তিনি বলেন, “বাজেট বা জিডিপি কিছুই বুঝি না। বুঝি শুধু বাজারে গিয়ে পকেটের টাকা মিলছে না পণ্যের দামের সঙ্গে।”
এই দুরবস্থায় শুধু দিনমজুরই নন, রেহাই নেই চাকরিজীবীদেরও। আয় বাড়ছে না, কিন্তু খরচ ও করের বোঝা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোয় চাপ বেড়েছে মধ্যবিত্তদের ওপর।
চাকরিজীবীরা বলছেন, “করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালে অন্তত মাস শেষে কিছুটা সঞ্চয় রাখা সম্ভব হতো। এখন মাস শেষ হয় ধার করে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে চলমান মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এমন অবস্থায় আসন্ন বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রধান দাবি—দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা হোক।
শুধু বাজার নয়, জীবনযাত্রার মান নিয়েও শঙ্কা রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের। তারা বলছে, উচ্চশিক্ষার খরচ দিনদিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের আহ্বান—“সরকার যেন বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ায়, বিশেষ করে ভর্তুকি ও স্কলারশিপে।”
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে অসন্তোষ। সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়ন এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সেবার সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকেরা।
সর্বোপরি, নিরাপত্তা, খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষায় স্বস্তি এনে দেবে এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট চান সব শ্রেণিপেশার মানুষ। কেউ বলছেন, “একটা দিনও যেন ঘরে ফিরে মনে হয়—হ্যাঁ, আজ একটু স্বস্তিতে কাটল।”
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট হওয়ায় প্রত্যাশার পাল্লাও ভারী। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এই বাজেট হবে দুর্বিষহ ব্যয়ভার কমানোর রূপরেখা—একটি বাস্তবমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যা সত্যিকার অর্থে বৈষম্য কমাবে এবং জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
Leave a Reply