কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসছে। আর তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাটে বেড়েছে গরুর সরবরাহ ও মানুষের ভিড়। তবে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও গরুর দাম ও চাহিদা নিয়ে চলছে ভিন্নমত। সবচেয়ে বেশি চাহিদা এবার মাঝারি সাইজের গরুতে, যা ক্রেতা ও বিক্রেতা—উভয়ের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
মেহেরপুরের শতবর্ষী বামন্দি নিশিপুর হাটে প্রতিদিন হাজার পাঁচেক গবাদিপশুর জমায়েত হচ্ছে। হাটে আগত ক্রেতারা জানান, গরু দেখা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দাম বাড়তি হওয়ায় তাদের বাজেটের সঙ্গে মিলছে না। এক ক্রেতার ভাষ্য,
“পছন্দের গরু পেলেও দাম অনেকটা বেশি—খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব হয়তো এখানে পড়েছে।”
অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গার আমলডাঙ্গা হাটে গরুর সরবরাহ এতটাই বেশি যে হাট ছাড়িয়ে গরু রাখা হচ্ছে মহাসড়কে। এখন পর্যন্ত জেলার প্রায় ৭৫ হাজার গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে ব্যাপারীদের মধ্যে আশঙ্কা, কম ক্রেতার উপস্থিতিতে গরু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এক গরু ব্যবসায়ী জানান,
“যে হারে গরু এসেছে, সে হারে বিক্রি শুরু হয়নি। আমরা ধারণা করছি, হয়তো অর্ধেক গরুও বিক্রি নাও হতে পারে।”
নাটোরের মৌখা, তেবাড়িয়া, সিংড়া সহ ছোট-বড় ২৬টি হাটেও জমজমাট পরিবেশ দেখা গেছে। কিন্তু এখানেও দাম নিয়ে চলছে দর কষাকষি। অনেক বিক্রেতা বলছেন,
“গরুর জন্য এক লাখ ৯০ হাজার চাইছি, ক্রেতা বলছে এক লাখ ৫০! কেউ কেউ আবার বলছে, বড় বড় লোকদের গরু আছে, কিনবে কারা?”
হাটে গরু কেনা-বেচার পাশাপাশি হাসিল আদায় ও ভেটেরিনারি সেবাও চলমান রয়েছে। একাধিক হাটে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হাসিল নেওয়া হচ্ছে, যেখানে সরকার নির্ধারিত হার অনেক কম। তবে প্রায় সব হাটেই ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম উপস্থিত রয়েছে। তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, জেলায় মোট গরুর চাহিদা ১ লাখ ২৪ হাজার, অথচ সরবরাহ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৭৪ হাজার গরু অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে।
বিক্রেতারা চান ঈদের আগেই পশু বিক্রি করে ঘরে ফিরতে, আর ক্রেতারা খুঁজছেন বাজেটের মধ্যে পছন্দের গরুটি। এখন দেখার বিষয়, শেষ মুহূর্তে এই চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় কেমন হয়।
Leave a Reply