বর্ষা মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। ক্যালেন্ডারের পাতায় বর্ষা আসতে বাকি প্রায় দুই সপ্তাহ। তবে তার আগেই রাজধানী ঢাকা জলজটে নাকাল—একাধিক এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে গ্রীষ্মকালীন জলাবদ্ধতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এখনই এই অবস্থা হয়, তাহলে বর্ষায় রাজধানীর নাগরিক জীবন কোন চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
মিরপুর, ধানমন্ডি-২৭, গাবতলী, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুরসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি জমে থাকার দীর্ঘস্থায়ী প্রবণতা।
মিরপুরের বাসিন্দারা বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে আধাঘণ্টা বৃষ্টিতেই সড়কে পানি থৈ থৈ করে। ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় দেখা যায়, ড্রেনেজ পাইপ ও ম্যানহোলে ময়লা জমে আছে, যার ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না স্থানীয় এক যুবক জব্বার বলেন,
“পানি জমলে সিটি করপোরেশনকে ফোন করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাই। দু-তিনজন এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও কার্যকর কিছু করেন না।”
আরেক বাসিন্দা লিটু বলেন,
“হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ঘরে ঢুকতেই স্ত্রী বলল—বাহিরে গায়ের গন্ধ নিয়ে ভেতরে আসবেন না।” গত দশ বছরে দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনে। কিন্তু বাস্তবতায় এর সুফল সাধারণ মানুষ এখনো পায়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, তবে স্থায়ী সমাধানের কোনও আলামত নেই। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,
“দুই সিটি করপোরেশন এবার আগেভাগেই ড্রেন পরিষ্কার শুরু করেছে। খালের নিচটা গভীর করা ও ময়লা পরিষ্কার করা গেলে কিছুটা হলেও জলাবদ্ধতা কমতে পারে।”
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,
“পরিকল্পিত নগরায়ন এবং খাল উদ্ধার ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতা সমাধান সম্ভব নয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সমন্বিত নেটওয়ার্কে আনা না গেলে সমস্যা বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন,
“একটি আধুনিক শহরের জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার বিজ্ঞানসম্মত নকশা ছাড়া টেকসই সমাধান কল্পনাও করা যায় না।”
Leave a Reply