পদ্মা ও গড়াই—এই দুই নদীর বুকে গড়ে উঠেছে এক অঘোষিত বালুর সাম্রাজ্য। কুষ্টিয়া জেলায় ২১টি বালুমহল থেকে প্রতিবছর উত্তোলন করা হচ্ছে অন্তত ২০০ কোটি টাকার বালু, অথচ সরকারি কোষাগারে জমা পড়ছে মাত্র ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এই বৈষম্যপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক আখলকুস সাফা ও রুহুল আমিন বাবু। ছবিতে ছিলেন ইসমাইল হোসেন জান।
জেলার প্রতিটি বালুমহলে দেখা গেছে অস্ত্রধারী পাহারাদার, যারা স্থানীয় জনগণ ও সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেন। প্রকাশ্যে চলে রাতভর বালু উত্তোলন ও ট্রাকে বিক্রি। শুধু একটি স্পট থেকেই প্রতিদিন যায় ৭-৮টি ট্রাক। এলাকাবাসীরা বলেন, এই নদীর বালু মানে সোনা।
নিয়ম না মেনে নদীর গভীর পয়েন্ট ও ব্রিজের কাছাকাছি জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে শতবর্ষী হার্ডিংস ব্রিজ। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করলেও, পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং ডাউনস্ট্রিম এলাকার বালুমহল স্থানান্তরের সুপারিশও থেকে গেছে উপেক্ষিত।
২১টি বালুমহলের মধ্যে মাত্র দুটি ইজারা অনুমোদিত। নাব্যতা সংকট, পরিবেশগত ঝুঁকি, এবং আইনি জটিলতায় বাকি ১৭টি ঘাটে বালু তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো—অবৈধ উত্তোলন চলছে সরকারি চোখের সামনেই।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বেশ কিছু বালুমহল রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবাধীন। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নামও উঠে এসেছে, যদিও তারা প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করেননি। তবে ঘাটের ব্যবসায়ীদের কথায় স্পষ্ট—তাদের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী রাজনীতিকদের সমর্থন।
পরিচয় গোপন করে সাংবাদিকদল একাধিক বালুমহলে অনুসন্ধান চালিয়েছে। দেখা গেছে, রাতভর চলে বালু উত্তোলন ও বিক্রি। অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, এমনকি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারি রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট, প্রশাসনের নীরবতা রহস্যজনক। অনেকেই বলছেন, উৎকোচ ও দলীয় প্রভাব প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নেওয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা বলছেন, কুষ্টিয়ায় একবার ডিসি হয়ে গেলে, সাধারণত তারা জায়গা ছাড়তে চান না—উল্টো থেকে যাওয়ার নানা চেষ্টা চলে।
অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ, নদীর গতিপথ, এবং জনপথে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। বালুবোঝাই ওভারলোড ট্রাক এখন সড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ।
Leave a Reply