মানবপ্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রশংসা করা। কেউ ভালো গুণের অধিকারী হলে তাকে সম্মান দেখানোইসলামে প্রশংসা, তার গুণাবলি তুলে ধরা—এটা আমাদের সামাজিক সৌজন্য। তবে ইসলাম এ বিষয়ে দিয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন, কিভাবে প্রশংসা করতে হবে, কোন সীমারেখা মেনে চলতে হবে এবং কীভাবে নিজের ধারণা প্রকাশ করতে হবে বিনয়ের সঙ্গে।
নবী সা. এক হাদীসে এমন একটি দোআ শিখিয়েছেন, যা প্রশংসার ভাষাকে বিনয়ী ও পরিমিত করে তোলে:
أَحْسِبُ فُلَانًا وَاللَّهُ حَسِيبُهُ وَلَا أُزَكِّي عَلَى اللَّهِ أَحَدًا، أَحْسِبُهُ كَذَا وَكَذَاআহসিবু ফুলানান, ওয়াল্লাহু হাসীবুহু, ওয়ালা উযাক্কি ‘আলাল্লাহি আহাদান, আহসিবুহু কাযা কাযা।
অর্থ:
“আমি অমুককে এ রকম বলে মনে করি। আল্লাহই তার হিসাব রাখেন। আমি আল্লাহর ওপর কাউকে নিশ্চয়তার সাথে প্রশংসা করি না। আমি তাকে অমুক অমুক গুণের অধিকারী মনে করি।”
ব্যক্তিগত ধারণা ও সীমাবদ্ধতা স্বীকার
কেউ নেককার, আল্লাহভীরু বা সদাচারী মনে হলে তার প্রশংসা করা যেতে পারে—কিন্তু শর্ত হলো, আমরা যেন তা আমাদের ব্যক্তিগত ধারণা বলে উল্লেখ করি, নিশ্চিত কথা না বলি।
আল্লাহর জ্ঞানের প্রতি সম্মান
যেহেতু কারো অন্তরের অবস্থান এবং প্রকৃত তাকওয়া আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, তাই প্রশংসার সময় এমন শব্দ ব্যবহার করা উচিত যা আল্লাহর সর্বজ্ঞতাকে স্বীকৃতি দেয়।
অতিরিক্ত প্রশংসার ক্ষতি
বাড়াবাড়ি প্রশংসা মানুষকে গর্বিত করে তুলতে পারে। এতে প্রশংসিত ব্যক্তির অন্তরে অহংকার বাসা বাঁধতে পারে, যা আত্মার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
প্রশংসার মাধ্যমে দীনী শিক্ষা দেওয়া
সুন্নাত মোতাবেক প্রশংসা একটি দাওয়াতি কাজ হতে পারে—যা মানুষকে বিনয়, আত্মসচেতনতা ও তাকওয়ার পথে উৎসাহিত করে।
এই মাসনূন দোআ শুধু প্রশংসার ভাষা নয়—বরং এটি একটি আত্মিক শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা সীমিত, আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ এবং আমাদের প্রতিটি উচ্চারণ আল্লাহর জ্ঞানের সামনে নতি স্বীকার করেই হতে হবে।
আজকের সমাজে প্রশংসা প্রায়ই হয়ে ওঠে বাহুল্য ও লোকদেখানো প্রশংসার প্রদর্শনী। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে বিনয়ী, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রশংসার ভাষা। আসুন, আমরা রাসুলুল্লাহ সা.-এর এই সুন্নাতি শিক্ষাকে নিজের জীবনে চর্চা করি এবং তা সমাজেও ছড়িয়ে দিই।
Leave a Reply