বাংলাদেশের অভিনয় ইতিহাসে যাদের নাম চিরস্মরণীয়, সেই হুমায়ুন ফরীদি তাদের অন্যতম। আজ ২৯ মে, এই কিংবদন্তি অভিনেতার ৭৪তম জন্মদিন। যদিও তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই, তার শক্তিশালী অভিনয়, অসাধারণ উপস্থিতি আর বহুমাত্রিক প্রতিভা এখনও মঞ্চ থেকে পর্দা—সবখানে বয়ে বেড়ায় অমলিন ছাপ।
১৯৫২ সালের ২৯ মে পুরান ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেওয়া হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন এক অসামান্য প্রতিভা। যদিও জন্ম ঢাকায়, বাবার সরকারি চাকরির কারণে শৈশব-কৈশোর কেটেছে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এইচএসসি শেষ করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে। স্বাধীনতার পর তিনি ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে এবং প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে অনার্স সম্পন্ন করেন। এখানেই পরিচয় ঘটে নাট্যজন সেলিম আল দীনের সঙ্গে।
১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগরে অনুষ্ঠিত নাট্যোৎসবে ফরীদি রচনা ও পরিচালনা করেন নাটক ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’, যা সেরা নাটক হিসেবে প্রশংসিত হয়।
মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই ফরীদি ছিলেন একইভাবে প্রভাবশালী। ‘ভণ্ড’, ‘সন্ত্রাস’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মাতৃত্ব’, ‘জয়যাত্রা’, ‘ব্যাচেলর’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘পালাবি কোথায়’—এসব চলচ্চিত্রে তার অভিনয় আজও সিনেমাপ্রেমীদের কাছে অনবদ্য।
২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবং ২০১৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন নৃত্য ও অভিনয়কলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। প্রথম বিয়ে করেন ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে, তাদের একটি মেয়ে দেবযানি। পরে বিয়ে করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে, তবে ২০০৮ সালে সেই বিয়ে বিচ্ছেদে গড়ায়। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, মাত্র ৫৯ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি শিল্পী চিরবিদায় নেন। তবে তার রেখে যাওয়া শিল্পকর্ম, ভাবনা আর সংলাপ আজও আমাদের মনে বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে আগামীর প্রজন্মের হৃদয়ে।
Leave a Reply