মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটা। ঢাকার আকাশজুড়ে তখন নেমে এসেছে ঘন নিস্তব্ধতা। এক শহর ঘুমে তলিয়ে, অন্যদিকে মাটির নিচে জমে থাকা শক্তি হঠাৎই জানান দিলো তার অস্তিত্ব — রাজধানীতে অনুভূত হলো ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প।
এই কম্পন অনেকেই হয়তো টের পাননি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মৃদু কম্পন নিছকই সতর্কবার্তা। কারণ, এটি হতে পারে আরও ভয়ঙ্কর মূল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস — যাকে বলা হয় ফোরশক (Foreshock)।
বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে আসছেন—ঢাকা বড় এক ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভূকম্পনবিদদের মতে, গড়ে প্রতি ১৫০ বছরে সাত মাত্রার বড় একটি ভূমিকম্প ঘটে এই অঞ্চলে। সর্বশেষ এমন ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৩০ সালে। অর্থাৎ সময়ের ঘড়িতে এখন চলছে সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞের কাউন্টডাউন।
ঢাকার গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি হওয়া ৭২,০০০-এরও বেশি ভবন, যেগুলোর বড় অংশই নির্মিত হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নীতিমালা উপেক্ষা করে। ঢাকায় যদি একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে সেই বহুতল ভবনগুলো এক মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, মাত্র এক সেকেন্ডেই দুই লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হতে পারে, যদি যথাযথ প্রস্তুতি না থাকে।
আরও ভয়াবহ তথ্য—ঢাকার আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক সক্রিয় ফল্ট লাইন, যেমন ডাউকি ফল্ট, সীতাকুন্ড-টেকনাফ ফল্ট, যেগুলো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত।
একবার যদি এই টেকটোনিক প্লেটগুলো জমে থাকা শক্তি হঠাৎই মুক্ত করে দেয়, তাহলে আট মাত্রার ভূমিকম্প ঘটতে পারে। তখন, প্রশ্নটা একটাই—এই শহর কি টিকে থাকবে?
ঢাকায় খোলা জায়গার সংখ্যা অপ্রতুল। ভূমিকম্পের পর জরুরি উদ্ধার কাজ চালানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। প্রশ্ন উঠেছে—
আমাদের স্ট্রাকচারগুলো কি কোড অনুযায়ী তৈরি?
বিল্ডিংগুলো কি ভূমিকম্প সহনীয়?
আমরা কি মানুষের জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, নাকি শুধু মুনাফাকেই?
সেই দেশগুলোও প্রস্তুত ছিল বলে দাবি করত। কিন্তু মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ হারিয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপে। আমরা কি প্রস্তুত?
মাটির নিচে শক্তি জমছে প্রতিনিয়ত। আপনি হয়তো ঘুমিয়ে আছেন, কিন্তু প্রকৃতি জেগে আছে। বড় ভূমিকম্প কখন আঘাত হানবে, কেউ জানে না। কিন্তু প্রস্তুতি থাকলেই কমানো সম্ভব প্রাণহানির ঝুঁকি।
আজকের এই কম্পন ভবিষ্যতের আরও ভয়াল ধ্বংসের পূর্বাভাস হতে পারে। এখনই সময় নিজেদের প্রস্তুত করার।
Leave a Reply