জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক — এক বন্ধন, যার ভিত্তি গড়া হয়েছে বন্ধুত্ব, বিশ্বাস ও আস্থার উপরে। এই ঐতিহাসিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এখন সফরে রয়েছেন জাপানে। আর তার সফরকে ঘিরেই টোকিও শহরের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে সূর্যোদয়ের আগে থেকেই।
সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে টোকিওতে আয়োজিত নিক্কি ফোরামের ৩০তম সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ড. ইউনুস।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন,
“এশিয়ার দেশগুলোকে পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে—এটাই সময়ের দাবি।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ছিল ইতিহাসের মোড় ঘোরানো অধ্যায়।
“ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে একনায়কতন্ত্রকে পিছু হটতে হয়েছে,”—উল্লেখ করেন তিনি।
এরপরের সেশনে, টোকিওর আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘Justice, Freedom & Dignity’-এর প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. ইউনুস বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলেন। তিনি জাতিসংঘের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,
“শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের শাসন আমলে প্রায় ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এবং অসংখ্য মানুষ ‘গুম’ হয়েছে। ব্যাংক খাত লুটপাট ও বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠরা।”
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করতে কাজ শুরু করেছে, যার ফলে রিজার্ভ বাড়ছে এবং ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরে আসছে।
ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রশ্নে ড. ইউনুস বলেন,
“শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তবে তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন দিলে সংস্কার প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন,
“সংবিধান ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান রেখে সংস্কার, বিচার ও অবাধ নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।”
ডিসেম্বরের পর আরও ছয় মাস সময় চেয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেন—এই সময়টিতে নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আনা সম্ভব।
ড. ইউনুস বলেন,
“নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন জাপানের বিশ্বস্ত প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহযোগিতা।”
তিনি জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র উল্লেখ করে আরও বলেন,
“জাপান সবসময় শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের পাশে থেকেছে, এই সংকটেও জাপানকে আমরা পাশে চাই।”
Leave a Reply