প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় কারাগারে কাটানোর পর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে মুক্তি পেলেন। বুধবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর একদিন আগেই, মঙ্গলবার সকালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগ তার বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে। বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তির আদেশ পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ মামলাটির তিন পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায়ে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে’, এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার প্রধান নীতিগুলোর ‘স্পষ্ট অবহেলা’ ঘটেছে। ফলে তার দোষী সাব্যস্ততা ও শাস্তি বহাল রাখা সম্ভব নয়।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচারিক আদালত ও আপিল বিভাগের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণের মূল্যায়ন যথাযথভাবে হয়নি। নতুন করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিচারপতিরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট পূর্বের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। পরবর্তীতে আজহার রিভিউ আবেদন করেন, যা ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত মামলায় প্রথম রিভিউ শুনানির পর পুনরায় পূর্ণাঙ্গ আপিলের সুযোগ পাওয়া মামলা।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই পুনঃআপিলের সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্য দিয়েই দেশে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ধারায় একটি নতুন নজির তৈরি হলো— যেখানে বিচারকরা ‘ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
Leave a Reply