রাজধানীর আশাব্যঞ্জক প্রকল্প মেট্রোরেল—স্বপ্নের যাত্রা শুরু হলেও বাস্তবে তা এখন যাত্রীদের জন্য রীতিমতো ধৈর্যের পরীক্ষা। সকাল-সন্ধ্যার অফিসপাড়া কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যস্ত সময়—প্রতিটি ঘণ্টাতেই চোখে পড়ছে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন, গাদাগাদি করে ওঠানামা, আর ক্লান্তির ছাপ। প্রশ্ন একটাই—কবে আসবে প্রতিশ্রুত ৮ বগির সেই স্বস্তির ট্রেন?
উদ্বোধনের সময় থেকেই মাত্র ৬টি কোচ নিয়ে চলছে মেট্রোরেল, যদিও প্রতিশ্রুতি ছিল ৮ বগির ট্রেন। শুরুতে সীমিত যাত্রীর জন্য এই ব্যবস্থা যথেষ্ট মনে হলেও বর্তমানে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা হাজার হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় তা অপ্রতুল হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা বলছেন, ভিড় এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অনেক সময় ট্রেন ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করাটাও আরামদায়ক নয়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (DMTCL) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, কোচ সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও তার বাস্তবায়ন তাৎক্ষণিক নয়।
তিনি বলেন,
“৬টি কোচ থেকে ৮টিতে উন্নীত করতে হলে সিগন্যালিং সিস্টেম, প্ল্যাটফর্ম এবং রেল ইঞ্জিনিয়ারিং কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন কারিগরি সমীক্ষা ও নির্মাণ সংশোধন। কাজটি সহজ নয়—কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে।”
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, ২০২২-২০৩০ পর্যন্ত ৬ বগির ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল আগেই। ৮ বগির আপগ্রেডেশন ধরা হয়েছিল ২০৩০ সালের পর। কিন্তু যাত্রীচাপ ও গণদাবির কারণে কর্তৃপক্ষ এখন সময় এগিয়ে আনার কথা ভাবছে।
ফারুক আহমেদ বলেন,
“মূল নকশায় ৬ কোচই চালানোর কথা ছিল। তবে যাত্রীদের চাপ দিন দিন বাড়ছে, এজন্য আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই কোচ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিচ্ছি। যদিও তখন কোনো স্পেসিফিক কস্ট বা কারিগরি বিবরণ দেওয়া হয়নি, তবুও এখন কাজটি শুরুর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
যাত্রীরা বলছে , দীর্ঘ অপেক্ষা, গাদাগাদি করে যাত্রা, এমনকি কখনো কখনো ট্রেন বিকল হয়ে পড়াএসবই যাত্রীদের দুর্ভোগের অংশ হয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন, “এই যানজটের শহরে মেট্রোরেল মানে আশার আলো, কিন্তু দিনে দিনে সেটাই আবার দুর্ভোগে রূপ নিচ্ছে।”
তাদের দাবি, ট্রেন ও কোচ সংখ্যা বাড়ানো, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভিড় ব্যবস্থাপনায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসেবে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয় উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর চালু হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল। এখন চলছে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের নির্মাণ। স্বপ্নের এই উড়ালযাত্রা যেন বাস্তবেই মানুষের যাপিত জীবনের অংশ হয়ে ওঠে, তার জন্য প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজন সময়োচিত বাস্তবায়ন। কারণ, যানজটবিধ্বস্ত ঢাকা শহরের মানুষ আর প্রতীক্ষা নয়, চায় প্রতিকারের বাস্তব পদক্ষেপ
Leave a Reply