যুক্তরাষ্ট্রকে চীন ও রাশিয়ার উন্নততর ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা থেকে রক্ষায় ‘গোল্ডেন ডোম’ নামে একটি যুগান্তকারী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রকল্প নয়, বরং ওয়াশিংটনের বৈশ্বিক নেতৃত্ব পুনঃস্থাপনের প্রতীকও।
হোয়াইট হাউসে গতকাল (মঙ্গলবার) দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প জানান, তার দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ হিসেবে ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পটির লক্ষ্য—চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যালিস্টিক, ক্রুজ এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে এ প্রকল্প এক যুগান্তকারী সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইনকে ‘গোল্ডেন ডোম’ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, ২০২৯ সালের মধ্যেই এই প্রতিরক্ষা ছাতাটি কার্যকর করা সম্ভব হবে।
ট্রাম্প বলেন, “গোল্ডেন ডোম কেবল একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য তৈরি একটি প্রতিশ্রুতি। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনো আকাশ, স্থল ও মহাকাশ ভিত্তিক হামলা থেকে শতভাগ সুরক্ষা দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
তিনি আরও জানান, প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে বেড়ে ১৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ট্রাম্পের ভাষ্য, “গোল্ডেন ডোম হবে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এবং পরিপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি।”
প্রকল্পটির নকশা ইসরায়েলের বহুল আলোচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগটি প্রযুক্তিগতভাবে আরও বিস্তৃত, উন্নত এবং হাইপারসনিক অস্ত্র ঠেকানোর সক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে ট্রাম্প জানান, কানাডা ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র যদি মিত্র দেশগুলোকে যুক্ত করতে পারে, তাহলে এটি এক বহুজাতিক প্রতিরক্ষা জোটে রূপ নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA) ও পেন্টাগনের একাধিক প্রতিবেদন বলছে, চীন ও রাশিয়ার আগুয়ান ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি মার্কিন প্রতিরক্ষাকে কোণঠাসা করে তুলছে। ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্প তারই জবাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া ও চীনের হাইপারসনিক অস্ত্রগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে পর্যাপ্ত নয়।
এক সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু একটি প্রতিক্রিয়া নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক সুপরিকল্পিত পাল্টা পদক্ষেপ।”
বিশ্ব রাজনীতিতে যখন নতুন ধরণের প্রতিরক্ষা জোট ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তখন ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্প এক নতুন ভূরাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। এটি কতটা কার্যকর হবে, কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, আর কতটা বৈশ্বিক সমর্থন পাবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু স্পষ্ট—বিশ্ব এখন আরেকটি প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
Leave a Reply