গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, যাতে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
এই অভিযোগের পেছনে বাস্তব প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক দিনগুলোর ধারাবাহিক হামলা, যেখানে শুধু সোমবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া সমালোচনা যেখানে গাজায় চলমান যুদ্ধকে “বহুরূপী নৃশংসতা” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে তা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলার গতি কমায়নি। বরং, হাসপাতালের মতো মানবিক অবকাঠামো এখন ইসরায়েলি আক্রমণের সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, গাজায় সামান্য সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো ত্রাণ বিতরণই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লাখো মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান ইসরায়েলি অভিযানে কমপক্ষে ৫৩,৫৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২১,৬৮৮ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো নিখোঁজকে মৃত ধরে মোট মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলায় প্রায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০-এর বেশি মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস। সেই ঘটনার পর থেকেই ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ধারাবাহিক বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে, যার প্রভাব এখন হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব ধরনের বেসামরিক পরিকাঠামোয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র ‘নিরপেক্ষ অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচিত হলেও, গাজায় তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে হাসপাতালে জরুরি সেবা বন্ধ করার এই কৌশলকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের একাধিক কর্মকর্তা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজার জনগণ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে জীবন বাঁচানোর শেষ আশ্রয়স্থল—হাসপাতালগুলো—ও আর নিরাপদ নয়।
Leave a Reply