ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় রাতভর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, এমন সময় যখন আন্তর্জাতিক মহল এই যুদ্ধের নির্মমতা নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় জাতিসংঘ সতর্ক করেছে—গাজায় অন্তত ১৪,০০০ নবজাতক আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারাতে পারে, যদি অবরুদ্ধ অঞ্চলে জরুরি ত্রাণ না পৌঁছে।
গাজার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের ‘ক্ষুধানীতির’ কারণে ২ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক দিনে একটিও ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হয়নি, যদিও সামান্য সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
চলমান আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও দ্রুত বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩,৫৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২১,৬৮৮ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অফিস বলছে, আসল মৃত্যুর সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়েছে, কারণ হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন—যাদের মৃত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এই সর্বশেষ হামলাগুলো এমন সময় চালানো হয়েছে, যখন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের যুদ্ধকৌশলকে ‘নৃশংস’ বলে সমালোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, এই সংঘাতের সূত্রপাত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,১৩৯ জনকে হত্যা করে এবং ২০০-র বেশি মানুষকে অপহরণ করে, বলে দাবি করে ইসরায়েল।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গত কয়েক মাস ধরে গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে—ধ্বংস করে দিচ্ছে শহর, বাস্তুচ্যুত করছে লাখ লাখ মানুষ, এবং কার্যত বন্ধ করে দিচ্ছে ত্রাণ সহায়তা প্রবাহ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা এখন ২১শ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে, যেখানে রোগ, ক্ষুধা ও মানসিক বিপর্যয় ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে।
বিশ্ব নেতারা যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানালেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, আর এই যুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা—গাজার নবজাতকেরা—এখন বোমায় নয়, মারা যাচ্ছে অনাহারে।
Leave a Reply