গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভোররাতের ভয়াবহ বিমান হামলায় অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৬ জন নিহত হয়েছেন ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত আল-মাওয়াসিতে।
এই হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল নতুন স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর এসেছে। একই সময় কাতারে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবারও শুরু করেছে তেলআবিব।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩,২৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২০,৬৭৩ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, কারণ হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ, যাদের অধিকাংশই হয়তো মারা গেছেন।
আল-মাওয়াসি, গাজার দক্ষিণে একটি উপকূলীয় অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েল নিজেই মানুষকে আশ্রয় নিতে বলেছিল। সেখানেই এত বড় প্রাণহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, “রাতে পুরো পরিবার ঘুমের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।”
যুদ্ধের আট মাস পার হওয়ার পর বাগদাদে এক জরুরি আরব সম্মেলনে আঞ্চলিক নেতারা একযোগে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানান এবং গাজায় অবাধ ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দাবি করেন।
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির একটি সম্ভাব্য রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এতে ধাপে ধাপে জিম্মি মুক্তি, ত্রাণ প্রবেশ এবং সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে কূটনৈতিক পথচলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে, তবে বর্তমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে আলোচনাগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি লোককে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজায়। ইসরায়েল এটিকে তাদের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দিন বলে বর্ণনা করে। এখনও অনেক জিম্মি গাজায় অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান এই যুদ্ধ পরিস্থিতি শুধু গাজার মানুষের দুর্ভোগই বাড়াবে না, বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান আরও জোরালো হচ্ছে— যুদ্ধ বন্ধ, মানবাধিকার রক্ষা এবং বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।
Leave a Reply