২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের নামে এবার নামকরণ করা হলো ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়ক। ঢাকার হৃদয়ে এই প্রতীকী স্বীকৃতি একদিকে যেমন শহীদ ফারহানের ত্যাগের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন, অন্যদিকে গণআন্দোলনের চেতনাকে ধরে রাখার একটি দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন নামফলক উন্মোচন করেন। এ সময় শহীদ ফারহানের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শিক্ষক এবং সহপাঠীরাও উপস্থিত ছিলেন।
উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেন—
“ফারহান ফাইয়াজের মতো তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের অঙ্গীকারের শক্তি বাড়ায়। যতদিন না বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নামেও সড়ক নামকরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
শহীদ ফারহানের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন—
“আমার সন্তানের রক্ত যেন বৃথা না যায়। রাষ্ট্র যেন এ প্রজন্মের সাহসিকতাকে ভুলে না যায়। শহীদদের নাম শুধু সড়কে নয়, হৃদয়ে গেঁথে রাখতে হবে।”
পেছনে ফিরে তাকালে, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ইতিহাসের এক কালো দিন। ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রাপা প্লাজা ও জেনেটিক প্লাজার মাঝখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়ানো একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফাইয়াজ) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় ফারহানের বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে। সে সময় আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—সংবিধানসম্মত সুযোগ-সুবিধার সমতা এবং শিক্ষায় বৈষম্য নিরসন।
ধামরাইয়ের ছেলে, ঢাকার সন্তান ফারহান আজ শুধুই আর একটি নাম নয়—সে যুব সমাজের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতীক। ধানমন্ডির এই সড়ক এখন শুধুই একটি পথ নয়, এটি একটি স্মৃতির বহিঃপ্রকাশ, আন্দোলনের অনুপ্রেরণা।
ঢাকা শহরে এমন নামকরণ বিরল নয়, কিন্তু একাদশ শ্রেণির এক শহীদের নামে রাস্তাটি উৎসর্গ করা—এটি যুবতরুণদের অধিকার আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a Reply