ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “একজন ভবঘুরে বা সাধারণ অপরাধী কেন সাম্যকে হত্যা করবে? হত্যার পেছনে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আন্দোলনের সময় সাম্য একটি পোস্ট দিয়েছিল, যেখানে দেশের পক্ষে কথা বলেছিল। এই কারণেই তাকে টার্গেট করা হতে পারে।”
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকার উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
মানববন্ধনের মূল দাবি ছিল সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিত করা।
“জাতীয় সংগীতবিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল সাম্যের”—রিজভী
সাম্যের অবস্থান ছিল দেশের প্রতীক ও জাতীয় ঐতিহ্যের পক্ষে, উল্লেখ করে রিজভী বলেন, “সে জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধে সরব ছিল। এই অবস্থান কি তার প্রাণ কেড়ে নিল?”
তিনি আরও প্রশ্ন করেন—“ক্যাম্পাসে কেন রক্ত ঝরছে? শিক্ষাঙ্গনে কেন এমন সহিংসতা?”
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “ঢাবির উপাচার্যের কাছে বিচার চাইতে গেলে শিক্ষার্থীদের ‘তুই তোকারি’ করা হয়। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। উপাচার্য ও প্রক্টর একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপেক্ষতা নষ্ট করছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “ঢাবি প্রশাসনের মাথায় যে দর্শন কাজ করছে, তা একটি বিশেষ দলের রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী।”
একই বক্তব্যে রিজভী দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে সরকার সাদরে গ্রহণ করে, আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবাসনের দাবিতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। কেন এই দ্বিচারিতা?”
সতর্কবার্তা: সাম্য হত্যাকে ভিন্ন খাতে নিলে পরিণতি সুখকর হবে না
রিজভী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “সাম্যের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কারা—তা চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এই হত্যাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া হলে তা সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, “ডানে-বামে না তাকিয়ে, জনগণের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করুন। অন্যথায় কাউকেই রক্ষা করা যাবে না।”
শাহরিয়ার আলম সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দির গেটের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।
এই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা নিয়েও উঠছে নতুন করে প্রশ্ন।
Leave a Reply