ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার ভোর থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ১১৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এই হামলাকে ইসরায়েল বলছে “গিডিয়নের রথ” নামে একটি নতুন এবং বিস্তৃত সামরিক অভিযানের “প্রারম্ভিক ধাপ”।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে গাজার অভ্যন্তরে “নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দখল” করা এবং তা বজায় রাখা। এটি চলমান সাত মাসব্যাপী যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম বড় সামরিক তৎপরতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবারের আগ্রাসনের পর উত্তর গাজার হাজার হাজার বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া এলাকা থেকে মানুষজন সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।
গাজা থেকে এক মানবিক সহায়তাকর্মী জানান, “এটি শুধুমাত্র একটি বিমান হামলা নয় – এটি সম্পূর্ণ পাড়া গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ৫৩,১১৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২০,২১৪ জন আহত হয়েছেন গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে।
তবে গাজার সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃত্যুসংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, কারণ বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছে এবং তাদের মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘গিডিয়নের রথ’ অভিযান: কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ না কি গণবিধ্বংসী ধাপ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গিডিয়নের রথ’ হলো ইসরায়েলের এক নতুন ধরণের সামরিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে গাজার বিভিন্ন স্থানে স্থল, আকাশ ও সাঁজোয়া বাহিনী সমন্বিত হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েল এই অভিযানকে সন্ত্রাসবিরোধী আখ্যা দিলেও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যার রূপ বলে মনে করছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, “এমন একটি অভিযানের নামকরণ বাইবেলের যুদ্ধোপম ভাষায় করা, যেমন গিডিয়নের রথ, ইঙ্গিত দেয় এটি একটি নিছক সামরিক অভিযান নয় – বরং এটি ধ্বংসের মাধ্যমে মুছে ফেলার কৌশল।”
এই নতুন হামলার ফলে গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর, খাবার ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ, এবং অবরুদ্ধ এলাকায় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
মধ্যস্থতার চেষ্টা চললেও কূটনৈতিক অচলাবস্থার কারণে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত।
Leave a Reply