সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে, ‘বিদেশিদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কেন?’ অথচ আমরা নিজেরাই চিকিৎসার জন্য দলবেঁধে ভারতে যাই। অথচ যখন সেই দ্বার বন্ধ হয়ে যায়, তখন প্রশ্ন জাগে না—আমরা কেন বিদেশে যাই? আমাদের প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা, হৃদরোগের মতো জটিল চিকিৎসা। তখন তো বিদেশি চিকিৎসককেই আনতে হয়। অর্থাৎ আমরা যা পারি না, সেখানে সেরা জনকেই ডাকতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা। আমাদের এই জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ডকে আরও শক্তিশালী করতে হলে, উন্নত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আর সেটিই আনবে এই আন্তর্জাতিক অপারেটররা। আমরা বিনিয়োগ করছি না, বরং Build-Operate-Transfer (BOT) চুক্তির মাধ্যমে আমরা তাদের দক্ষতায় লাভবান হচ্ছি।
এই বন্দরের উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠামো নয়—এটি হবে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানের এক মহা সুযোগ। যেসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী শত শত বন্দর পরিচালনা করছে, তাদের অভিজ্ঞতায় আমরা আমাদের নিজস্ব মানুষদের প্রশিক্ষণ দেব। আজ যারা শিখবে, কাল তারাই বিশ্বের শীর্ষ বন্দরে নেতৃত্ব দেবে।
অনেকে ভাবেন চাকরি কমে যাবে। বাস্তবে উল্টোটা ঘটবে। আন্তর্জাতিক মানের বন্দরের প্রয়োজন অনেক দক্ষ জনবল। প্রযুক্তি থাকলেও, বড় বন্দর পরিচালনার জন্য বেশি লোক দরকার। আমাদের নিজস্ব শ্রমিকেরা এই কাজে নিয়োজিত হবে, কারণ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এখান থেকেই লোক নিয়োগ দেবে।
ধরা যাক, ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে একটি আধুনিক বন্দর গড়ে উঠল। ততদিনে আমাদের লোকজনও হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের বহু বন্দরে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশিরা। কারণ আমাদের লোকজন স্মার্ট, দ্রুত শিখে নেয় এবং কম খরচে দক্ষতা দেখাতে পারে।
এই সুযোগ শুধু চট্টগ্রামের নয়, সমগ্র বাংলাদেশের। আমাদের রয়েছে এক ঐতিহাসিক ব্যবসায়ী ঐতিহ্য। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, বরিশাল—এইসব অঞ্চলের মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জলপথে ব্যবসা করে এসেছে। তারা ব্যবসা বোঝে, নৌপথ বোঝে। সেই বাণিজ্যের রক্ত আজও আমাদের শরীরে বহমান।
আজকে আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে সম্মান জানানো। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেওয়া। আমাদের নেতৃত্ব—ডিয়ারেড মিরাজ জামানের মতো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো, যারা এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
আমরা যদি এই প্রকল্পগুলো সময়মতো শুরু করি, তবে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ এক নতুন অর্থনৈতিক যুগে প্রবেশ করবে। আর সেই পথে চট্টগ্রাম বন্দর হবে আমাদের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি।
আমরা যদি সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করতে পারি—যে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বন্দরব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দেবে—তবে এই পদক্ষেপ হবে কেবল উন্নয়ন নয়, এক ঐতিহাসিক উত্তরণ।
Leave a Reply