দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, অঙ্গ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর যাবতীয় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর পরিকল্পিত দমন-পীড়ন চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুম, খুন, ধর্ষণ, বেআইনি আটক, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং গণহত্যার মতো গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ, যা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রমাণিত।
বিশেষ করে, চলতি বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত গণ-আন্দোলন দমনে সংঘটিত সহিংসতায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সহিংস অভিযানে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সাক্ষী ও বাদীদের হুমকি প্রদান এবং বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা এই শঙ্কাকে আরও দৃঢ় করেছে।
সরকার মনে করে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী এসব কর্মকাণ্ড একটি উগ্র ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের কার্যকলাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, গণমাধ্যম বা অনলাইনে প্রচারসহ সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা-কল্পনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন মোড়।
Leave a Reply