উপমহাদেশের দুই বৃহৎ ক্রিকেট লিগ—ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এবং পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)—সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনায় স্থগিত হওয়ার পর পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক তারকা বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের অনেকেই আপাতত ফিরতে আগ্রহী নন। নিরাপত্তা সংশয় এবং আসন্ন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্রস্তুতির বিষয়টিও তাদের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে।
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায় গত সপ্তাহে। বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচ চলাকালীন সময়েই ভারত দাবি করে, জম্মু-কাশ্মীরসহ একাধিক শহরে পাকিস্তান হামলা চালায়। ম্যাচটি মাঝপথেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তার একদিন আগেই রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের নিকটে ভারত ড্রোন হামলা চালায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় এবং পিএসএল ও আইপিএল—উভয়ই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে পড়ে। বিদেশি খেলোয়াড়রা দ্রুত দেশ ত্যাগ করেন, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররাও ছিলেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ফিরতে অনীহা অজি তারকাদের বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর এবং বিসিসিআই ও পিসিবি উভয়ই নিজেদের লিগ পুনরায় শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো ১৬ মে থেকে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফাইনালের সম্ভাব্য তারিখও পিছিয়ে ২৫ মে থেকে ৩০ মে নির্ধারণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
তবে আইপিএল বা পিএসএল পুনরায় শুরু হলেও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের অনেকে ফিরতে আগ্রহী নন। অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AAP) জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আরও একটি বড় কারণ হলো—আগামী ১১ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচ, যেখানে অস্ট্রেলিয়া অংশ নিচ্ছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি সূত্রে জানা গেছে, যেসব দলের প্লেয়াররা ইতোমধ্যেই প্লে-অফ থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের অনীহা সবচেয়ে বেশি। যেমন—সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্যাট কামিন্স, ট্রাভিস হেড, অ্যাডাম জাম্পা এবং চেন্নাই সুপার কিংসের নাথান এলিস।
তবে যাদের দল এখনও শিরোপার দৌড়ে রয়েছে, তারা ফিরতে পারেন, যদি ম্যাচগুলো সীমান্ত থেকে অনেক দূরের ভেন্যুতে আয়োজন করা হয়।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা অব্যাহত টুর্নামেন্টে না ফেরার সিদ্ধান্তে যারা রয়েছেন, তাদের পাশে থাকবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সংস্থাটি জানিয়েছে, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমন্বয় তারা নিশ্চিত করবে।
ক্রিকেট কেবল খেলার মাঠেই সংঘটিত হয় না; এটি রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইপিএল ও পিএসএলের মতো লিগগুলো শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক আস্থার সূচক হিসেবেও বিবেচিত হয়। অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের অনীহা এই বার্তাই দেয়—নিরাপত্তা, প্রস্তুতি এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ মিলিয়ে আজকের পেশাদার ক্রিকেটারদের সিদ্ধান্ত খুবই সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
Leave a Reply