আওয়ামী লীগকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচিকে ঘিরে যে আপত্তিকর স্লোগানগুলো জনমনে প্রশ্ন তুলেছে, তার পূর্ণ দায় সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
একইসঙ্গে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যায় সহযোগিতা করা দল ও গোষ্ঠীগুলোকে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কারভাবে জাতির সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
সোমবার (১২ মে) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এনসিপি জানায়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক আন্দোলনে নানা রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিলেও একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এমন সব স্লোগান ব্যবহার করেছে যা বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামের পরিপন্থী। এ ধরনের আচরণ কেবল আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকেই ক্ষুণ্ন করেনি, বরং জুলাই পরবর্তী জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনাকেও ব্যাহত করেছে।”
বিবৃতিতে এনসিপি স্পষ্ট করে জানায়, তাদের কোনো সদস্য এই কর্মসূচিতে দলীয় স্লোগান বা ইতিহাসবিরোধী কোনো বক্তব্য দেয়নি। বরং দলটির সদস্যদের ভাষণ ও স্লোগানে ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আন্দোলনের সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন নিয়ে এক পক্ষ আপত্তি জানালেও, অংশগ্রহণকারীরা দায়িত্বশীল ও দৃঢ়ভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছেন — যা দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।”
রাজনীতির পূর্বশর্ত: ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা
এনসিপি মনে করে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কার্যকর অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে এই দেশের ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রতি অটল স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের উচিত নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জনগণের সামনে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা।
“জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে অতীতের অপরাধের দায় এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং সত্য উদঘাটনের মাধ্যমেই সম্মিলিত অগ্রগতি সম্ভব,” বলা হয় বিবৃতিতে।
চব্বিশের অভ্যুত্থান ও নাগরিক ভূমিকা
এনসিপি উল্লেখ করে, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ, যাঁরা ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকেই ‘বাংলাদেশপন্থী’ ভূমিকায় নতুন বাংলাদেশের পথনির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে।
“যদি কোনো রাজনৈতিক দলের আগের আদর্শগত অবস্থান জাতিকে বিভাজনের পথে ঠেলে দেয়, তবে সেই দলের দায়িত্ব হলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে ঐক্যের রাজনীতিতে ফিরে আসা,” বিবৃতিতে বলা হয়।
‘মুজিববাদ’ পরাস্তের আহ্বান
বিবৃতির শেষাংশে এনসিপি উল্লেখ করে, “আমরা বিশ্বাস করি, কেবল জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই মুজিববাদের একক আধিপত্যকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। বিভক্তি নয়, সম্মিলিত চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে।”
দলের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত এবং দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য দূরদর্শিতা এখন সময়ের দাবি।”
Leave a Reply