ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দুই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ—আইপিএল ও পিএসএলের ওপর। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সামরিক উত্তাপ, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ড্রোন আক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে দেশ-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে। ইতিমধ্যে দুটি ম্যাচ স্থগিত হয়েছে, একটি লিগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য দেশে।
শুক্রবার ধর্মশালায় দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচ চলাকালে ভারতের একাধিক শহরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় মাত্র ১০.১ ওভারে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। সীমান্ত থেকে মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধর্মশালায় এমন অবস্থায় দ্রুত এক সপ্তাহের জন্য টুর্নামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অন্যদিকে, একইদিনে রাওয়ালপিন্ডিতে পেশোয়ার জালমি ও করাচি কিংসের মধ্যকার পিএসএল ম্যাচটিও অনির্ধারিত ড্রোন হামলার শঙ্কায় আগেভাগেই স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরো পিএসএল টুর্নামেন্ট স্থানান্তর করা হয় দুবাইয়ে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ: অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ
এই অস্থির পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে বিদেশি খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে। ভারত-পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের তারকা মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও ট্রাভিস হেড আইপিএলে অংশ নিতে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, অন্যদিকে পাকিস্তানে রয়েছেন আরও কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে আছেন এইডেন মারক্রাম, হেইনরিখ ক্লাসেন ও মার্কো ইয়ানসেন; একইসঙ্গে পিএসএলে অংশ নিচ্ছেন দেশটির আরও কয়েকজন খেলোয়াড়।
ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (CSA) নির্বাহী প্রধান অ্যান্ড্রু ব্রিটজেকে এক বিবৃতিতে বলেন:
খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপোষ হবে না। আমরা প্রতিনিয়ত আইপিএলে থাকা আমাদের সকল খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট নিচ্ছি।
অন্যদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানায়:
ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। অস্ট্রেলীয় সরকার, পিসিবি, বিসিসিআই ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের খেলোয়াড় ও সহায়তা কর্মীদের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ইতোমধ্যে পাকিস্তানে থাকা নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনকে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে। চার্টার্ড ফ্লাইটে করে তাদের দুবাইয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।
যদিও আইপিএল ও পিএসএলের গভীর জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু বর্তমান অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতি এই লিগগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেলে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
Leave a Reply