ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চরমে পৌঁছায়, যখন মধ্যরাতের আকাশে দুই পক্ষের যুদ্ধবিমানের মধ্যে সংঘটিত হয় সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ এবং তীব্র এয়ার এনকাউন্টার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন একে আখ্যা দিয়েছে “আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী ডগ ফাইট” হিসেবে।
চোখ রাঙানো হামলা-পাল্টা হামলা সন্ধ্যার পরপরই ভারতীয় বাহিনী আজাদ কাশ্মীর ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কয়েকটি স্থানে আক্রমণ চালায় বলে দাবি পাকিস্তানের। এই অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় রাতভর পাক আকাশে উড়েছে ১২৫টি যুদ্ধবিমান, ভারতের পক্ষ থেকে অংশ নেয় আনুমানিক ৭৫ থেকে ৮০টি ফাইটার জেট। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে আকাশযুদ্ধ, যার কেন্দ্রে ছিল উচ্চমাত্রার মিসাইল বিনিময়—কোনো কোনো ক্ষেত্রে যার পাল্লা ছিল ১৬০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে আছে ভারতের তিনটি রাফাল জেট—মাত্র কয়েক বছর আগে ফ্রান্স থেকে কেনা ভারতের অন্যতম আধুনিক যুদ্ধবিমান।
তবে ভারত সরকার এ পর্যন্ত বিমান হারানোর কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
এদিকে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের ওয়ান গ্রামে একটি অজ্ঞাত বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সিএনএন, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে। এএফপি এবং রয়টার্স-এর প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ স্পষ্ট দেখা গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিহ্নিত অংশ।
কোনো সীমান্ত লঙ্ঘন হয়নি, তবে উত্তেজনা তুঙ্গে দুই দেশেরই জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এই সংঘাতে কোনো যুদ্ধবিমান অপর পক্ষের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। তবে এতবড় মাত্রায় ফাইটার জেট ও মিসাইলের অংশগ্রহণ এই ঘটনাকে অতীতের সীমিত সংঘাত থেকে আলাদা করে তুলেছে।
২০১৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দেখা গিয়েছিল এক সংক্ষিপ্ত ডগ ফাইট, যেখানে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানে আটক হয়েছিলেন। তবে এবার কোনো পক্ষই অপমানের পুনরাবৃত্তি চায়নি, ফলে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণের রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে উভয় পক্ষ।
বুধবার সকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দেন নিরীহ পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রাণহানির প্রতিশোধ নিতে। এরপর থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য বড়সড় পাল্টা হামলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান এর আগেও কাশ্মীর ইস্যুতে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছিল দুই দেশের প্রায় দেড় হাজার সেনার। এরপর সীমান্তে নিয়মিত গোলাগুলি হলেও এতো বড় পরিসরের বিমান সংঘাত বিরল। পেহেলগামে সম্প্রতি হওয়া হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত যে প্রত্যাঘাত চালিয়েছে, তা আবারও দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে নতুন করে বারুদের গন্ধ ছড়াচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের এ ধরনের সংঘর্ষ শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগের বিষয়। প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—এই সংঘর্ষ কেবল কৌশলগত অবস্থান নাকি বড় পরিসরের যুদ্ধের পূর্বাভাস?
Leave a Reply