কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর একের পর এক প্রতিক্রিয়া এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। সীমান্তে গোলাবিনিময়ের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল এবং সিন্ধু পানি চুক্তিও স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (৭ মে) পর্যন্ত পরিস্থিতি সরাসরি সামরিক সংঘাতে পৌঁছেছে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এক গভীর অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।
এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, সংঘাত যত না ভারত-পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তার চেয়েও বেশি প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব: দ্রব্যমূল্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা হুমকিতে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংঘাত আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. মনিরুল ইসলাম আকন্দ। সময় সংবাদকে তিনি বলেন,
“সামরিকভাবে বাংলাদেশ সরাসরি হুমকিতে না থাকলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারি। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে। এটি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই হুমকি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন সংকট মোকাবিলায় পশ্চিমা বিশ্বের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশকেও কূটনৈতিকভাবে শান্তি স্থাপন ও সমঝোতার উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন,
“আমাদের প্রধান আশংকা হলো—এটি যেন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ না নেয়। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে সমগ্র অঞ্চলের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়বে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার প্রভাব পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজন আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের।”
যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান: শান্তিপূর্ণ সমাধানে ফিরতে হবে এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত ও পাকিস্তান—উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
উত্তর-পশ্চিম ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির সক্রিয়তা না বাড়ালে এই সংকট বহু স্তরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
Leave a Reply