প্রথমবারের মতো সমুদ্রবাহিত ড্রোন দিয়ে আকাশে ওড়ানো রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এসইউ-৩০ গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেন। যুদ্ধের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই হামলার মধ্য দিয়ে সমর কৌশলে নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত।
শুক্রবার (২ মে) কৃষ্ণ সাগরের ওপর রুশ নিয়ন্ত্রিত আকাশে এই ঘটনা ঘটে বলে শনিবার ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (GUR) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, “এটি বিশ্বে প্রথমবারের মতো যে কোনো যুদ্ধবিমান সমুদ্রগামী ড্রোনের সরাসরি আঘাতে ধ্বংস হয়েছে।”ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘মাগুরা ভি৫’ নামের সমুদ্রগামী আক্রমণ ড্রোন ব্যবহার করে এই অভিযান চালানো হয়। লক্ষ্যবস্তু ছিল কৃষ্ণ সাগরের উপকূলীয় শহর নভোরোসিস্কের কাছে একটি রাশিয়ান এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান। ড্রোন থেকে গুলি ছোঁড়ার পরপরই বিমানটি বাতাসে আগুন জ্বলে ওঠে এবং পরে সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
এই ঘটনাকে “যুদ্ধের ধরন বদলে দেওয়ার মতো অগ্রগতি” বলে বর্ণনা করছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহল। যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাশিয়ার এক প্রভাবশালী সামরিক ব্লগার দাবি করেছেন, “এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমানটি আসলেই গুলি করে নামানো হয়েছে।”এর আগেও, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেন দাবি করেছিল যে তারা ‘মাগুরা ভি৫’ ড্রোন দিয়ে দুটি রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ সামরিক ভারসাম্যে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করছে বলে মত প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রোন-ভিত্তিক সমুদ্র আক্রমণ এখন কেবল জাহাজ নয়, আকাশপথেও হুমকি হয়ে উঠছে, যা যুদ্ধ কৌশলে যুগান্তকারী মোড় নির্দেশ করে।ড্রোন হামলার জের ধরে নভোরোসিস্ক শহরে একটি শস্য টার্মিনাল, কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে জানা গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক।
পরিস্থিতির অবনতিতে নভোরোসিস্কের মেয়র শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তবে শহরটিতে রুশ সামরিক ঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দর থাকায় এটি আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের ভূমিকা দিন দিন শুধু বাড়ছে না, বরং তা যুদ্ধের গতি ও প্রকৃতি পাল্টে দিচ্ছে। স্থল, আকাশ ও সাগরের মধ্যকার ব্যবধান এখন আগের মতো স্পষ্ট নয়। সাগরের নিচ থেকে আসা ড্রোন আকাশে যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দিতে পারলে, ভবিষ্যতের যুদ্ধের রণাঙ্গন হবে আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও বহুস্তর বিশিষ্ট।
এই ঘটনাকে ‘টেকটনিক শিফট ইন ওয়ারফেয়ার’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
Leave a Reply