বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর মোংলা এখন উন্নয়নের বড় একটি পর্যায়ে প্রবেশ করছে। চীন সরকারের সহযোগিতায় ৪,০৬৮ কোটি টাকার এক বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে মোংলা বন্দর, যার লক্ষ্য—বন্দরকে আধুনিক, অটোমেটেড এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণ করা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য কার্যকর সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন না করা গেলে এই প্রকল্পও কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাবে না।
চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (CCECC) এর সঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সম্প্রতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (G2G DPM) আওতায় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এই চুক্তি সই হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে দুটি আধুনিক কন্টেইনার জেটি (৩৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের), লোডেড ও খালি কন্টেইনারের জন্য ইয়ার্ড, ক্রেন ও অন্যান্য হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট, এবং পুরো ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন চালু করা হবে। এ ছাড়া জলযান ও পণ্য খালাস-বোঝাই সুবিধাও সম্প্রসারিত হবে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থায়ন হবে সরকারি বরাদ্দ ও প্রকল্প-ঋণের সংমিশ্রণে।
এই উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি বড় নজির হয়ে উঠছে এই প্রকল্প। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, “এটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা শুধু দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দর হয়ে উঠবে একটি গ্রিন ও স্মার্ট পোর্ট, যেখানে সময় ও ব্যয়ের সাশ্রয় হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি সক্ষমতা।”
তবে স্থানীয় বন্দর ব্যবসায়ী ও ইস্টিভিডর মশইর রহমান বলছেন, “উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজনীয়, কিন্তু ব্যবসায়ীদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে তারা বিকল্প বন্দর বেছে নেবেন। শুধু অবকাঠামো দিয়ে বন্দরের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যাবে না।”
তিনি মনে করেন, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরের তুলনায় মোংলায় বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত না করা গেলে প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদে কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে না।
সম্ভাবনার দিগন্ত: আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
এই প্রকল্প শুধু মোংলার নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামোকে পাল্টে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। পণ্য পরিবহনে সময় সাশ্রয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পায়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের অঙ্গীকার, চীনের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ব্যবসায়ীদের কার্যকর সম্পৃক্ততা একত্রে নিশ্চিত করতে পারলেই মোংলা বন্দরের এই উন্নয়ন প্রকল্প হতে পারে বাংলাদেশে “বাণিজ্যিক পুনর্জাগরণের” অন্যতম দৃষ্টান্ত।
Leave a Reply