দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তে ফের চরম উত্তাপ। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ দাবি করেছে, তারা রাজস্থানে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে এক পাকিস্তানি রেঞ্জার্স সদস্যকে আটক করেছে। শনিবার (৩ মে) এ ঘটনা ঘটে। ওই সদস্যের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তবে তিনি বিএসএফের রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারের হেফাজতে রয়েছেন।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই মধ্যরাতে জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর সেক্টরে একযোগে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। গত ১০ দিনে এমন গুলি বিনিময়ের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে, তবে শনিবার রাতের গোলাগুলি ছিল সবচেয়ে বড়, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা অংশ নেয়।
এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও, পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
ঘটনার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট রয়েছে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। এর ঠিক পরদিনই পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ভারতের এক বিএসএফ সদস্য পূর্ণম কুমার সাহুকে আটক করে।
যদিও সীমান্তে অনিচ্ছাকৃত প্রবেশজনিত ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া রয়েছে, তবে বর্তমান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান এখনও সাহুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। একাধিক কূটনৈতিক বৈঠক হলেও সাহুর মুক্তির সময়সীমা কিংবা অবস্থান সম্পর্কে কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি ইসলামাবাদের তরফে।
এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স সদস্যের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে, ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে নয়াদিল্লি ইতোমধ্যে সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বাতিল করেছে এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রেখেছে। ইসলামাবাদও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি সিন্ধু চুক্তি ভঙ্গ করে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে, তাহলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ‘নাটকীয় রাজনীতি’র অভিযোগও এনেছেন।
Leave a Reply