ইয়েমেনের হোডেইদাহ প্রদেশের আল-সালিফ জেলার রাস ইসা তেল বন্দরে ফের যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে। এই একই স্থানে গত মাসে চালানো মার্কিন হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত ও ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন—যা ছিল ইয়েমেনে মার্কিন বাহিনীর অন্যতম ভয়াবহ অভিযান।
হুতি-ঘনিষ্ঠ আল মাসিরাহ টেলিভিশন জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় সাতটি মার্কিন বিমান হামলা এই বন্দরে চালানো হয়েছে। এতে করে ইয়েমেনের চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এদিকে হুতি গোষ্ঠী—যাদের আনুষ্ঠানিক নাম আনসার আল্লাহ—শুক্রবার সকালে ইসরায়েলের দিকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, লক্ষ্য ছিল রামাত ডেভিড সামরিক ঘাঁটি এবং তেল আবিব সংলগ্ন অঞ্চল। হুতিদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং তারা সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং দ্বিতীয়টির বিরুদ্ধেও ইন্টারসেপটর নিক্ষেপ করা হয়। কয়েকটি স্থানে সাইরেন বেজে উঠলেও কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটির গতি রোধের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো পর্যালোচনাধীন রয়েছে।
হুতি গোষ্ঠী জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে তারা এই সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের দাবি, যতদিন না গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে, ততদিন তারা ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জাহাজের ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে।
বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, মার্কিন অভিযান আরও বিস্তৃত রাস ইসায় নতুন এই হামলা এমন এক সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক তৎপরতা আরও বাড়াচ্ছে। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরীর মোতায়েন এক সপ্তাহ বাড়িয়েছেন, ফলে এখন দুইটি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ অঞ্চলটিতে সক্রিয় রয়েছে। পেন্টাগন বলছে, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, তবে বিশ্লেষকদের মতে এটি ইয়েমেন সংকটে ওয়াশিংটনের গভীর সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়।
মার্চ মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু অবকাঠামো নয়, বরং হুতি নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এতে করে বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা এয়ারওয়ার্স জানায়, শুধু মার্চ মাসেই ২৭ থেকে ৫৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
গত সোমবার রাতে আফ্রিকান অভিবাসীদের এক আটক কেন্দ্রে মার্কিন হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হন বলে হুতি গণমাধ্যম দাবি করেছে। এছাড়া রাজধানীর আশপাশে আরও ৮ জন নিহত হয়েছেন।
এই ক্রমবর্ধমান প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সম্প্রতি তিনজন মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথকে চিঠি লিখে বেসামরিক হতাহতের হিসাব চেয়েছেন।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজাররিক বলেছেন, “এই হামলাগুলো ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের জন্য দিন দিন বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। আমরা আবারও সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি, বিশেষ করে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।”
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিদিন পাল্টে যাচ্ছে। এর মাঝে ইয়েমেন যুদ্ধ রয়ে গেছে একটি জ্বলন্ত সংঘাত হিসেবে—যার মানবিক ও কূটনৈতিক প্রভাব পড়ছে সারা অঞ্চলে।
Leave a Reply