চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসছে—একটি লিড এজেন্সির অধীনে এবার এক হাজার হজযাত্রী দায়িত্বে থাকবেন। এই কোটা পূরণে যুক্ত থাকবে একাধিক সাব-এজেন্সি, যা সেবায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এজেন্সি প্রতিনিধিরা বলছেন, বিভিন্ন সাব-এজেন্সির ভিন্ন ভিন্ন হজ প্যাকেজের কারণে থাকা-খাওয়া ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় রক্ষা করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে হজযাত্রীদের সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা ও জবাবদিহিমূলক নীতিমালা দাবি করছেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ওভারসিস লিংকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল ওয়াহাব মামুন জানান,
কোটা পূরণের বিষয়টি দেখা হলেও গুণগত মানের দিকটি গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে হজ ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতে মনোপলির দিকে ঝুঁকতে পারে।
ট্যুর হাব বিডির সিইও সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘‘ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজিদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সেবায় বড় ধাক্কা লাগতে পারে। সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলে পরিস্থিতি সহজ হতো।’’
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে একটি এজেন্সির কোটা ৫০০ করা হয়েছিল, যা জানুয়ারিতে বাড়িয়ে এক হাজার করা হয়। আগামীতে এ সংখ্যা দুই হাজারে পৌঁছালে দেশের হজ এজেন্সির সংখ্যা নেমে আসবে ৩৫টিতে। এতে সংযুক্তি ও বিমান ভাড়ায় সিন্ডিকেট গঠনের আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার সতর্ক করে বলেছেন,
এজেন্সি সংখ্যা কমে গেলে পুরো ব্যবস্থাপনা মনোপলির হাতে চলে যেতে পারে। এ সংখ্যা ১০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, হাজিদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে সব এজেন্সিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, এজেন্সিগুলোকে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। কোনো এজেন্সির পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, চলতি বছর বাংলাদেশ এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর কোটা পেয়েও তা পূরণ করতে পারেনি। এবারের হজে যাচ্ছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন।
সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে দুটি—সাশ্রয়ী প্যাকেজের খরচ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের খরচ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা (খাবার ও কোরবানি ব্যতীত)। বেসরকারি হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা, যদিও এজেন্সিগুলো অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজও ঘোষণা করতে পারবে।
এছাড়া, বাতিল হওয়া হাব কমিটির সদস্যরা ও অন্যান্য গোষ্ঠী পৃথকভাবে বিভিন্ন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে খরচের ব্যবধানও লক্ষণীয়। খাবার খরচসহ সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ১৮ হাজার থেকে বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বোপরি, হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতা আনতে প্রয়োজন আরও সমন্বিত উদ্যোগ ও কঠোর নিয়ম-কানুন প্রয়োগ, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply