ইসলামে সালাত বা নামাজ কেবলমাত্র একটি দৈনন্দিন আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একজন মুসলমানের আত্মিক জীবনের মূল উৎস। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এই সালাত, যা ঈমানদারকে তার প্রভুর সঙ্গে জীবনের প্রতিটি ধাপে সংযুক্ত রাখে। সালাত এমন একটি অনন্য ইবাদত, যেখানে কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই একজন মানুষ সরাসরি আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
সিজদার সময় বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটে থাকে।” প্রতিদিনের এই পাঁচটি সালাত একজন মুসলমানকে তার জীবনের উদ্দেশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়, মনকে শুদ্ধ করে এবং আত্মাকে আল্লাহর পথের দিকে ফিরিয়ে আনে।
সালাতের মাধ্যমে জীবনে শৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সময় ব্যবস্থাপনার গুণ তৈরি হয়। ভোরে ফজরের জন্য ঘুম থেকে ওঠা, দিনের ব্যস্ততার মাঝেও যোহর ও আসর আদায় করা, দিনের শেষে মাগরিব ও ইশা পড়া—সবকিছু মিলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনচর্চা গড়ে ওঠে। এছাড়াও, সালাত এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক প্রশান্তির উৎস। যখন একজন মুসলমান সিজদায় পড়ে, তখন সে যেন দুনিয়ার সব টেনশন থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির সাগরে ডুবে যায়। সালাত শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামষ্টিকভাবেও মুসলিম উম্মাহকে একত্র করে। কাবার দিকে মুখ করে, একই ভাষায় ও একই পদ্ধতিতে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলমান একসাথে ইবাদত করে—যা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য জাগিয়ে তোলে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সালাত পালন করা আল্লাহর সরাসরি আদেশ।
কুরআনে বলা হয়েছে,
নিশ্চয়ই মুমিনদের জন্য সালাত নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে” (সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)।
সালাত ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া ইসলামে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য। তাই সালাতকে কেবল একটি ফরজ হিসেবেই নয়, বরং জীবন ও আত্মার শক্তির উৎস হিসেবে দেখা উচিত। যত চাপই থাকুক না কেন, প্রতিদিন পাঁচবার সালাত একজন মুসলমানকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার সুযোগ দেয়—আর সেই ফেরাই তাকে শান্তি, আশ্রয় ও আস্থা দেয়।
Leave a Reply