বিশ্বখ্যাত রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। সোমবার (২১ এপ্রিল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস শুধু ক্যাথলিকদের নেতা ছিলেন না—তিনি ছিলেন নৈতিকতা, বিনয় এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। তার নেতৃত্বে ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আধুনিক ভাবনার মিশেল নতুন মাত্রা পেয়েছিল।
১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে জন্মগ্রহণ করেন হোর্হে মারিও বেরগোলিও। রসায়নে ডিপ্লোমা অর্জনের পর কিছুদিন শিক্ষকতা করেন, পরে ১৯৫৮ সালে যিশু সংঘে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি।
ধাপে ধাপে দায়িত্বের উচ্চতায় উঠে ১৯৯৮ সালে বুয়েনস আইরেসের আর্চবিশপ ও ২০০১ সালে কার্ডিনাল হন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের পদত্যাগের পর তিনিই নির্বাচিত হন রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে। তিনিই প্রথম জেসুইট, প্রথম লাতিন আমেরিকান এবং ১২০০ বছরের মধ্যে প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ।
তারুণ্যে একবার প্রেমেও পড়েছিলেন তিনি—নিজের জীবনবৃত্তান্তে তা অকপটে তুলে ধরেছেন। বলেছেন,
যদি যাজক না হতাম, হয়তো তাকেই বিয়ে করতাম।
পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি শিক্ষকতা করতেন। রসায়ন ও সাহিত্য পড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্মিক দিকেও দিকনির্দেশনা দিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, “
একজন ভালো শিক্ষক শুধু বই পড়ান না—তিনি শেখার আগুন জ্বালান।
ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসাও ছিল নিখাদ। আর্জেন্টিনার সান লরেঞ্জো ক্লাবের নিবন্ধিত সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে ক্লাবটি যখন লিগ জেতে, তখন পোপ ফ্রান্সিস গর্বভরে তাদের জার্সি গ্রহণ করেছিলেন।
২১ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে তার ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করতে হয়েছিল। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সাধারণত এতে স্বাভাবিক জীবন সম্ভব নয়। কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস সব প্রতিকূলতা জয় করে শক্ত ও কর্মময় জীবন কাটিয়েছেন।
প্রযুক্তির দিকেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। ১৯৯০ সাল থেকে টেলিভিশন দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না, ইন্টারনেট ব্রাউজ করতেন না। তবে নিজের বার্তা পৌঁছে দিতেন টুইটারসহ নানা মাধ্যমে।
তার দর্শন ছিল সরল ও গভীর:
প্রযুক্তি মানুষের সহায়ক হোক, যেন মানুষ প্রযুক্তির দাস না হয়।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্ব হারাল এক অন্তরঙ্গ, মানবিক এবং দূরদর্শী নেতাকে—যিনি শুধু ধর্ম নয়, মানুষকেই সবচেয়ে বড় আশ্রয় হিসেবে দেখতেন।
Leave a Reply