হো চি মিন সিটি, ভিয়েতনাম – যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতির ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে ভিয়েতনাম। ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি রপ্তানি-নির্ভর এই দেশের ব্যবসাগুলোর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
SVC গ্রুপের সিইও কিউ কোক থান জানান, “গত দুই সপ্তাহ ধরে পুরো ইন্ডাস্ট্রির মানুষ পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছে।” তার ব্যবসা এখন অনিশ্চয়তার মুখে, কারণ মার্কিন শুল্কনীতি নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। শিপিং কন্টেইনারে থাকা কাজুর চালান আটকে আছে, আর মার্কিন কাস্টমস অফিসাররাও জানেন না কত কর আরোপ হবে।
ট্রাম্প ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক আরোপ করেছে। হ্যানয় ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ১০ এপ্রিল আলোচনার সূচনা হলেও, অনিশ্চয়তা থেকে গেছে।
ইক্যুইটি ফার্ম সিকিউরিটিজ কর্পোরেশনের প্রধান কৌশলবিদ টাইলার মানহ ডাং নগুয়েন বলেন, “আমরা চরম অনিশ্চয়তার সময় পার করছি – এটি যেন প্রতিদিন বদলে যাওয়া একটি রিয়েলিটি শো।”
ভিয়েতনামের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, যা জিডিপির ৩০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। তাই শুল্ক হুমকি শুধু অর্থনৈতিক আঘাত নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করছে।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের হ্যানয় সফর এবং ৪৫টি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প কটাক্ষ করে বলেন, “এটা যেন এমন বৈঠক – ‘আমরা কিভাবে আমেরিকাকে সমস্যায় ফেলব’।”
চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বে মধ্যপন্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে ভিয়েতনাম। “আমরা কখনোই একপক্ষ নিই না,” বলেন কৌশলবিদ নগুয়েন।
এই অস্থির প্রেক্ষাপটে, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের লক্ষ্যে তারা বোয়িং বিমান ও এলএনজি কেনার ঘোষণা দিয়েছে এবং মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি স্টারলিংককে পরীক্ষামূলক সেবা চালুর অনুমতিও দিয়েছে।
ট্রাম্পের হোল্ডিং কোম্পানি ভিয়েতনামে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের গল্ফ কোর্স ও হোটেল প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে – যা কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বল্পমেয়াদে কিছু কোম্পানি দ্রুত পণ্য পাঠাতে ব্যস্ত – কারণ ১০ শতাংশ শুল্ক এখনো কার্যকর। তবে দীর্ঘমেয়াদে ভিয়েতনাম এই শুল্ক যুদ্ধকে একটি কৌশলগত সুযোগে রূপান্তর করতে পারে।
ডায়নাম ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান ক্রেগ মার্টিন বলেন, “ভিয়েতনামে মানুষ এখন আরও কিছু করার জন্য প্রস্তুত। কারণ তারা জানে, এই অনিশ্চয়তার মাঝেও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশাল।”
বাণিজ্য স্বচ্ছ রাখতে হ্যানয় ইতিমধ্যে ‘মেইড ইন ভিয়েতনাম’ লেবেল ব্যবহার করে চীনা পণ্য আমদানি ঠেকাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইউরোচ্যাম ভিয়েতনামের প্রধান ব্রুনো জাসপার্ট বলেন, “ভিয়েতনাম তার অতীতের প্রতিটি যুদ্ধেই জয়ী হয়েছে। আমার বিশ্বাস, তারা এই শুল্ক যুদ্ধেও জয়ী হবে।”
Leave a Reply