আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাকি কিস্তি—চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি—ছাড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে চলতি অর্থবছরের শেষভাগে, অর্থাৎ আগামী জুন মাসে। ওই সময় আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে আছে। তবে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, চলমান রয়েছে।”
চলতি মাসের শুরুতে আইএমএফের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান পাপাজর্জিও। তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য বর্তমানে ১১৪ থেকে ১৩০ কোটি ডলার পর্যন্ত ছাড়ের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। যদিও গত ডিসেম্বরেই স্টাফ লেভেলে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর ফেব্রুয়ারিতে বোর্ড সভায় কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা ছিল, বিভিন্ন নীতিগত জটিলতায় তা বিলম্বিত হয়।
বিশেষ করে ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে টানাপোড়েন রয়েছে। তবে পাপাজর্জিও জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে না আইএমএফ, কিন্তু বর্তমান সময়টিকে তিনি “উপযুক্ত” বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল, মূল্যস্ফীতিও ধীরে ধীরে কমছে। যদিও এখনও জিডিপির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে, তবে আগামীতে সেটি ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
কর-জিডিপি অনুপাতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও উদ্যোগী হতে হবে বলেও জানান তিনি। “রাজস্ব আয় দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে, এমনকি কখনো কখনো কমেছে। করনীতিতে সংস্কার আনতে হবে, করছাড় এবং বিভাজিত করহারগুলো পর্যালোচনা করতে হবে,” বলেন পাপাজর্জিও।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সরকারের পরিবর্তনের পর কিছুটা ঋণ খেলাপির হার বেড়েছে, তবে আদায় ও তদারকির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। চলমান ঋণ কর্মসূচি শেষ হবে ২০২৬ সালে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
Leave a Reply