বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে, যার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মূল্যস্ফীতির শঙ্কা। নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধানে থাকা বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে ঝুঁকছেন আরও বেশি, যার ফলে স্বর্ণের দাম অভাবনীয় উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রথমবারের মতো ৩,২০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। স্পট গোল্ডের দাম ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩,২১৭.১৫ ডলার, যেখানে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩,২৩৭.৫৬ ডলারে পৌঁছায় কিছুক্ষণ পরেই। একইদিনে মার্কিন গোল্ড ফিউচারসের দামও ১.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩,২৩৪.৯০ ডলারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বাণিজ্য নীতির ফলে চীনের সাথে শুল্ক যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে—যেখানে আমেরিকা চীনা পণ্যে ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে এবং চীন পাল্টা হিসেবে ১২৫% পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে মার্কিন পণ্যের উপর। এই টানাপোড়েন বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছরেই সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৩,৫০০ ডলার ছুঁতে পারে এবং এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে, জার্মানির কমার্জব্যাংক বলছে, আগামী বছরের শেষে স্বর্ণের মূল্য ৩,০০০ ডলার ছুঁতে পারে।
কমার্জব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মার্চ মাস শেষে গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ETF) রাখা মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৪৫.৫ বিলিয়ন ডলারে।
স্বর্ণের বাজারে উত্থানের পেছনে অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় স্বর্ণ কেনা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা পাঁচ মাস স্বর্ণ ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। মার্চ মাসে তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৭৩.৭ মিলিয়ন ফাইন ট্রয় আউন্স, যা এক মাস আগেও ছিল ৭৩.৬১ মিলিয়ন।
এছাড়া ডয়েচে ব্যাংক তাদের পূর্বাভাস হালনাগাদ করে ২০২৫ সালের গড় দাম ৩,১৩৯ ডলার এবং ২০২৬ সালের জন্য ৩,৭০০ ডলার নির্ধারণ করেছে।
সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের অটুট আস্থা বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে স্বর্ণ আবারও প্রমাণ করেছে যে, এটি এখনও সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে অটুট রয়েছে।
Leave a Reply