মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিমালা ৯ এপ্রিল (বুধবার) মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে, যা বিশ্বের প্রায় সব প্রধান অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। শুল্কের আওতায় এসেছে চীনের পণ্যসহ আরও কয়েক ডজন দেশের রপ্তানি পণ্য। চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হার সর্বোচ্চ ১০৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কে বড় ধরনের সংকেত দিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এই শুল্ক ঘোষণার প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইনডেক্স থেকে মাত্র এক সপ্তাহে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে গেছে, যা ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া সূচকের ইতিহাসে অন্যতম বড় পতন।
জাপানের নিকেই সূচক (N225) ৩% এর বেশি কমেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার মান ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং ওয়াল স্ট্রিটে টানা পাঁচ দিনের ক্ষতির মুখে পড়েছে মার্কিন স্টক ফিউচারগুলো।
হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জানান,
বিভিন্ন দেশ আমাদের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে আসতে চায়।“
তিনি আরও বলেন,
চীনের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে, যদিও চীন ইতোমধ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপকে ‘চাপ প্রয়োগ’ হিসেবে দেখছে এবং দেশটির শীর্ষ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে একত্রে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত—তৈরি পোশাক—বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যার মধ্যে ৭৪০ কোটি ডলারই ছিল পোশাক। উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়বে, যা ভোক্তা চাহিদা হ্রাসের মাধ্যমে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
বাংলাদেশি পোশাকের দাম বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের বায়াররা বিকল্প গন্তব্য হিসেবে কেনিয়া, মিশর বা হন্ডুরাসের মতো দেশকে বেছে নিতে পারে, যাদের শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কম এবং ভৌগোলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ইউরোপীয় বাজারে আরও সক্রিয় হতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নতুন শুল্ক নীতিমালায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হারকে শত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মার্কিন ভোক্তার ওপর, যাদের ব্যয় বেড়ে যাবে এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি কমার পাশাপাশি তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমবে, যার নেতিবাচক প্রতিফলন পড়বে সারা বিশ্বে।”
Leave a Reply