বিদায়ী সরকার অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানো বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে অন্যতম পায়রা সমুদ্রবন্দর—এমনটাই মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা শেষে তিনি বলেন, সরকারি কেনাকাটায় দীর্ঘদিন ধরে একটি মাফিয়া চক্র সুযোগ নিয়েছে, তবে ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে শতভাগ অনলাইন টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।
একনেক সভায় ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন
চলতি অর্থবছরের অষ্টম একনেক সভায় ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের তৃতীয় পর্যায়, যার বাজেট প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকা।
সভায় উল্লেখ করা হয়, বালি ও পলি জমার ঝুঁকিতে থাকা পায়রা সমুদ্রবন্দর ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
পায়রা প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কঠোর মন্তব্য
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন,
“পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প অর্থনীতির জন্য বিষফোড়ার মতো। এটি বাস্তবায়নের সময় কেউ বিবেচনা করেনি যে এই নদীতে সমুদ্রবন্দর তো দূরের কথা, একটি কার্যকর নদীবন্দরও টেকসই নয়—কারণ এটি বছর বছর ড্রেজিং ছাড়া চালানো সম্ভব নয়। ড্রেজিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ না হলে এই বন্দরের কার্যক্রম, কয়লা সরবরাহ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের চালানোও সম্ভব হবে না।”
সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতার উদ্যোগ প্রায় ৫,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। দেশের ১৫০টি দরিদ্রপ্রবণ উপজেলায় শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর শুকনো খাবার সরবরাহ করা হবে, যেখানে অনিয়ম রোধে কঠোর তদারকি রাখা হবে।
সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দরপত্র প্রক্রিয়ার সংস্কার আনা হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন,
“একটি মাফিয়া চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে দরপত্র মূল্যায়ন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, ফলে বছরের পর বছর একই কোম্পানি বিভিন্ন নামে বা বেনামে দরপত্র পেয়ে আসছে। এখন আমরা ১০ শতাংশের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়েছি, যাতে প্রতিযোগিতা আরও উন্মুক্ত হয় এবং প্রকৃত দক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ পায়।”
সরকারি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সরকারি জমির সঠিক হিসাব তৈরি করা জরুরি। সরকারি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের খরচ কমানো সম্ভব হবে, যা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Leave a Reply