দোহা ফোরাম ২০২৫–এ অংশ নিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা অভিযোগ করেছেন, গাজায় চালানো “ভয়াবহ গণহত্যা” থেকে নজর সরাতে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল সবকিছুতেই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় সব হামলার যৌক্তিকতা হিসেবে।
আল-শারা বলেন, “ইসরায়েল এখন এমন এক রাষ্ট্র, যারা অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।”
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর থেকেই সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলা বেড়েছে। শুধু গত মাসেই দামেস্কের উপকণ্ঠ বেইত জিন্ন এলাকায় অন্তত ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। পাশাপাশি সিরিয়ার ভেতরে নতুন নতুন চেকপোস্ট স্থাপন ও নাগরিক আটক করার অভিযোগও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার প্রশাসন ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, সিরিয়া স্থিতিশীলতার দেশ হতে চায়। আমরা কোনো সংঘাত রপ্তানি করতে চাই না, ইসরায়েল-কেও না।” কিন্তু এর বদলে ইসরায়েল চরম সহিংসতা ও আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
ইসরায়েলের দাবি করা নতুন বাফার জোন বা ডিমিলিটারাইজড জোন প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা অঞ্চলকে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের ডিসএনগেজমেন্ট অ্যাকর্ড অর্ধশতাব্দী ধরে টিকে আছে; এটিই শান্তির ভিত্তি হওয়া উচিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকেই ইসরায়েল হামলার ভয় পায়, তবে সেই নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে? ইসরায়েল নয়, বরং সিরিয়াই আক্রান্ত হচ্ছে বারবার। তাই বাফার জোন দাবি করার নৈতিক অধিকার কার—এটা পরিষ্কার।”
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আল-শারা বলেন, সিরিয়া এখন পুনর্গঠন ও জাতীয় ঐক্যের পথে এগোচ্ছে। যদিও শতভাগ ঐকমত্য কোনো রাষ্ট্রেই সম্ভব নয়, তবুও তিনি দাবি করেন—দেশটি এখন “সচেতন ও অগ্রসরমান” একটি সময় পার করছে।
আল-শারা জানান, পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া বিভাজন মোকাবিলায় তার প্রশাসন বহু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্রোহকে শুধুই “সুন্নি বিদ্রোহ” হিসেবে চিহ্নিত করা ভুল, কারণ সিরিয়ার সব সম্প্রদায়ই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এমনকি আলাওয়ি সম্প্রদায়ের মানুষও আগের সরকারের চাপে ভুগেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উপকূলীয় এলাকায় আলাওয়ি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা ও সুয়েদায় বেদুইন গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে আল-শারা বলেন, এসব ঘটনা দুঃখজনক হলেও তার সরকার আইনের শাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ—আল-শারার অতীত ভূমিকার কারণে নারীর স্বাধীনতা সীমিত হতে পারে। তবে তিনি দাবি করেন, নারীরা তার শাসনে “সক্ষম ও সুরক্ষিত” এবং প্রশাসন ও সংসদে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হাস্যরস করে তিনি বলেন, “সিরিয়ার নারীদের নিয়ে নয়, বরং পুরুষদের নিয়েই ভয় পাওয়া উচিত!”
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আল-শারা বলেন, তার লক্ষ্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা নয়, বরং শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। তিনি জানান, মার্চ মাসে স্বাক্ষরিত অস্থায়ী সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে পাওয়া পাঁচ বছরের রূপান্তরকাল শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তার ভাষায়, “নেতা নির্বাচন করার অধিকার জনগণের। ইসলামেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি—শাসকের বৈধতা আসে মানুষের সন্তুষ্টি থেকে।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.