1. arshinagargroup75@gmail.com : Rofiqul Islam : Rofiqul Islam
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

সিরাজগঞ্জে দুই মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রণক্ষেত্রে কুলিয়ারচর-বাগধনালী: নিরাপত্তাহীনতায় গ্রামছাড়া শতাধিক পরিবার

রনি আহম্মেদ
  • Update Time : বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
  • ৭৪ Time View

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কুলিয়ারচর ও বাগধনালী গ্রাম দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে একের পর এক সংঘর্ষে অস্থির হয়ে উঠেছে। স্থানীয় দুই প্রভাবশালী নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই সহিংসতা এখন পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনের মতো চলমান সহিংসতায় ঘরবাড়ি ফেলে গ্রাম ছাড়ছেন অনেক বাসিন্দা। ভ্যান, রিকশা ও মাথায় করে আসবাবপত্র, গবাদিপশু নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বহু মানুষ, যদিও তাদের কেউই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা নদীভাঙনের শিকার নন।

গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সর্বশেষ ঘটনায় প্রাণ হারান কুলিয়ারচরের কৃষক নজরুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, তাকে প্রতিপক্ষ বাগধনালীর একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালিয়ে হত্যা করে। এরপর প্রতিশোধ হিসেবে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়—কুলিয়ারচরে চালানো হয় ব্যাপক লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং দখলের চেষ্টা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুই গ্রুপের প্রধান: কুলিয়ারচরের আজম রিদাউ এবং বাগধনালীর লিয়াকত হোসেন। এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা, জমি দখল, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে সংঘাত নিয়মিত ঘটে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, আজম রিদাউয়ের নেতৃত্বাধীন একটি সশস্ত্র বাহিনী এলাকার ভেতরে দাপটের সঙ্গে চাঁদা আদায় করে থাকে এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এড়াতে প্রভাব খাটায়।

বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়া এক নারী বলেন, “আমার স্বামীর কাছে চালের বস্তা ছিল, সব নিয়ে গেছে ওরা। গবাদিপশুও নিয়ে গেছে। দিনের বেলায় হামলা, রাত হলে আবার আতঙ্ক। আমরা বাঁচবো কোথায়?”

এ পর্যন্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে থানায় ও আদালতে দায়ের হয়েছে অন্তত ২৫টি মামলা। তবে পুলিশ বলছে, বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ উভয় পক্ষই নিয়মিতভাবে শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, “দুইটি প্রধান গ্রুপ—লিয়াকত ও আজম—অবিরাম সংঘর্ষের ইন্ধন দিচ্ছে। হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত যে অভিযোগ এসেছে, তার ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ ও দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা হবে।”

স্থানীয় প্রশাসনের মতে, প্রতিপক্ষকে দমন ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় দুই পক্ষের কোনো পক্ষই স্থায়ী শান্তিতে আগ্রহী নয়। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কোনো সমাধানে উপনীত হওয়া গেলেও পরবর্তীতে আবার সংঘর্ষ শুরু হচ্ছে। এমন অবস্থায় গ্রামবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং হতাশা।

এই দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা ইতোমধ্যে শুধু দুই গ্রামের ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং আশপাশের এলাকাগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। পরিস্থিতির অবসান এবং পুনঃস্থাপনযোগ্য শান্তি নিশ্চিতে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগ, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © arshinagar tv 2025
Design & Develop BY Coder Boss